ভোট প্রায় শেষ হতে চলল। শুরু হল সরকার গড়া নিয়ে ছোটাছুটি।
শাসক ও বিরোধী— দুই শিবিরই দাবি করছে, অনায়াসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আসছে তাদের। কিন্তু ধীরে ধীরে এমন সুরও জোরালো হচ্ছে, বিজেপি কিংবা কংগ্রেস, কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। অতএব সরকার গড়ার চাবিকাঠি আঞ্চলিক দলগুলির হাতেই।
২৩ মে ফল ঘোষণার পর পরিস্থিতি যাই হোক, মোটের উপর সম্ভাবনা পাঁচটি।
এক, আগের বারের মতো বিজেপি একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল। এনডিএর শরিকদের নিয়ে সরকার গড়ে ফেলল তারা।
দুই, বিজেপির সংখ্যা এতটাই কমে গেল যে শরিকদের উপর নির্ভরতা বেড়ে গেল। সে ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর বদলে রাজনাথ সিংহ, নিতিন গডকড়ীর মতো কাউকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য চাপ দিল এনডিএর শরিকরা।
তিন, এনডিএর শরিকদের নিয়েও বিজেপি সরকার গড়ার অবস্থায় পৌঁছতে পারল না। সে ক্ষেত্রে জগন্মোহন রেড্ডি, কে চন্দ্রশেখর রাও কিংবা নবীন পট্টনায়কদের শরণাপন্ন হতে হল। এই দলগুলিও সরকার গড়তে পারে বিজেপির সমর্থনে।
চার, শরিকদের নিয়েও সরকার গড়তে পারল না বিজেপি। সে ক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএর সরকার হল।
পাঁচ, বিরোধী শিবিরের আঞ্চলিক দলগুলি মিলে সরকার গড়ল। কংগ্রেস সমর্থন দিল বাইরে থেকে।
এখনও দুই দফার ভোট বাকি। ইভিএমে কী অপেক্ষা করছে, তাল ঠুকে বলতে পারছে না কোনও দলই। কিন্তু সরকার গড়ার আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। গত কালই তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও দেখা করে এসেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীর সঙ্গেও তিনি ফোনে কথা বলেছেন। দেখা করতে চেয়েছেন ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিনের সঙ্গেও। আর চন্দ্রবাবু নায়ডু আজই পৌঁছেছেন দিল্লিতে। সুপ্রিম কোর্ট আর নির্বাচন কমিশনে ইভিএম নিয়ে অভিযোগ জানাতে গিয়ে একজোট করে ফেলেছেন কংগ্রেস, তৃণমূল, আপ, ডিএমকে, বামেদের।
এর আগেও চন্দ্রশেখর রাও ‘ফেডারেল ফ্রন্ট’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু অখিলেশ যাদব, মায়াবতী সময় দিয়েও দেখা করেননি। কারণ, বিরোধী শিবিরের নেতাদের মতে, কেসিআর অ-বিজেপি ও অ-কংগ্রেস জোটের কথা বলছেন মোদীর হাতে তামাক খেয়ে। কেসিআর এ বার বিজয়নকে বলে এসেছেন দক্ষিণের কাউকে প্রধানমন্ত্রী করার কথা। কারণ, তাঁর দাবি, এ বার আঞ্চলিক দলের হাতেই চাবিকাঠি। বিজয়নও বলেন, ‘‘বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নিয়ে নয়।’’
ভোট হয়ে গেলেই বিরোধীদের বৈঠক চাইছেন চন্দ্রবাবু। ফল প্রকাশের আগেই তিনি বিরোধী শিবিরের নেতা স্থির করতে চান। কিন্তু কেসিআর-এর উদ্যোগে কী সেই প্রচেষ্টায় ভাঙন ধরছে? চন্দ্রবাবু আজ দিল্লিতে বলেন, ‘‘তেমন কিছুই হবে না। বিরোধীরা একজোট রয়েছে। ভোটের পরেই বৈঠকে সব স্থির হয়ে যাবে।’’ কংগ্রেসের নেতারাও চন্দ্রবাবুর পিছনে রয়েছে।
রাহুল গাঁধীও আজ বলেন, ‘‘ভোটের পরেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, দেশের জনতা কাকে প্রধানমন্ত্রী করতে চান।’’ কিন্তু বিজেপির নেতা রাম মাধবের বক্তব্য, ‘‘যখন দেশে বিজেপিই সরকার গড়ছে, আমরাই ‘কিং’। ‘কিংমেকার’-এর ভূমিকার অবকাশ নেই।’’