Coromandel Express accident

লাইন করে স্বেচ্ছায় রক্ত দিচ্ছেন ওঁরা

শনিবার সকাল থেকেই বালেশ্বর জেলা হাসপাতালে মৃতদেহের খোঁজে, আহতদের খোঁজে জড়ো হয়েছেন দূর-দূরান্তের বহু মানুষ। সেই সঙ্গে দেখা গিয়েছে আর এক দল মানুষের ভিড়। যাঁরা এসেছিলেন মানবসেবায়।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

বালেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ০৯:১৭
Share:

বালেশ্বরের কাছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেস। —নিজস্ব চিত্র।

চোখের সামনে মৃত্যুর মিছিল। হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আহতেরা। এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুহূর্তে মানবিকতার নজির গড়লেন ওড়িশাবাসী। স্বেচ্ছায় ছুটে এসে হাসপাতালে রক্তদানের জন্য লাইন দিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

শনিবার সকাল থেকেই বালেশ্বর জেলা হাসপাতালে মৃতদেহের খোঁজে, আহতদের খোঁজে জড়ো হয়েছেন দূর-দূরান্তের বহু মানুষ। সেই সঙ্গে দেখা গিয়েছে আর এক দল মানুষের ভিড়। যাঁরা এসেছিলেন মানবসেবায়। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, কলেজপড়ুয়া, বেসরকারি সংস্থার কর্মী থেকে ট্রাকচালকরা ভিড় জমিয়েছিলেন। আহতদের জন্য রক্তদানের তাগিদে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছেন তাঁরা। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে রক্ত দিতে দেখা গিয়েছে তাঁদের।

বালেশ্বর শহরের একটি বেসরকারি সংস্থার দুই কর্মী যেমন এসেছিলেন রক্ত দিতে। তাঁদের মধ্যে এক জন, বরদাপ্রসাদ দাস বললেন, ‘‘আমাদের ওড়িশা রাজ্যে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমাদের উচিত সবাই মিলে মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজে এগিয়ে আসা। আজ যদি আমি রক্ত দিই, কাল আমারও প্রয়োজন হলে নিশ্চয় সাহায্য পাব।’’ এমন ভাবনা থেকেই দুর্ঘটনার কথা শুনে ছুটে এসেছেন পেশায় ট্রাকচালক, বালেশ্বরের নীরগিরি এলাকার বাসিন্দা চিকম সিংহ-ও। বললেন, ‘‘আমরা রাস্তাঘাটে ট্রাক চালাই। একটা ছোট দুর্ঘটনা হলেও মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। আর এই দুর্ঘটনায় তো মৃতের সংখ্যাই গুনে ওঠা যাচ্ছে না। পাশে তো দাঁড়াতেই হবে। সবাই এগিয়ে এলে বহু মানুষ রক্তের অভাবে মৃত্যুর কবলে পড়া থেকে বাঁচবেন।’’

Advertisement

শুধু ব্যক্তিগত ভাবে ছুটে আসা নয়, সমষ্টিগত ভাবে কাজ করতেও দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে। এ দিন বালেশ্বরের একটি সামাজিক সংগঠনের ২০ জন সদস্য রক্তদান করেছেন বলে দাবি। সংগঠনের সদস্য পঙ্কজকুমার মোহান্তি বলেন, ‘‘যেখানেই রক্তের প্রয়োজন হয়, আমরা এগিয়ে যাই। এক সঙ্গে ২০ জন রক্ত দিলাম। প্রয়োজনে আরও সদস্য আসবেন।’’ রক্তদান ছাড়াও বহু সামাজিক সংগঠন দুর্ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষের সেবার কাজ করছেন, জল-বিস্কুট বিলি করে চলেছেন। বহু সংগঠনকে শুক্রবার রাত থেকে আটক যাত্রীদের খিচুড়ি খাওয়াতে দেখা গিয়েছে। ওড়িশার ‘রবিন হুড আর্মি’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের বালেশ্বরের সদস্য দিব্যজিৎ মহারানা বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজার জলের বোতল ও বিস্কুট বিলি করেছি। কত অসহায় মানুষ আটকে পড়েছেন, তাঁদের পরিজন এসে জল পাচ্ছেন না! পুলিশ-কর্মী, বিপর্যয় মোকাবিলার কাজে হাত লাগানো বাকি সকলকেও তো সুস্থ রাখতে হবে।’’ খড়্গপুর থেকে এসে নানা খাদ্যসামগ্রী বিলি করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement