কালা জাদু কি সত্যিই রয়েছে? এর অস্তিত্ব নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। আগে ভারতের নানা জায়গায় কালা জাদুতে বিশ্বাস ছিল মানুষের। কিন্তু বিজ্ঞান যত এগিয়েছে, সময়ের সঙ্গে সেই বিশ্বাস এখন কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে। ব্যতিক্রম অসমের এই গ্রাম।
অসমের মায়ং গ্রামে আজও কালা জাদুতে ভরসা রাখেন মানুষ। দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকেরাও ছুটে আসেন মায়ংয়ের কালা জাদু দেখতে। অনেকের মতে, সংস্কৃত শব্দ মায়া থেকেই মায়ং শব্দের উৎপত্তি।
গুয়াহাটি থেকে চার কিলোমিটার দূরে পবিতরা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কাছে অবস্থিত এই গ্রাম। এই গ্রামে ম্যায়ং সেন্ট্রাল নামে একটি মিউজিয়ামও রয়েছে। যেখানে কালা জাদুতে ব্যবহৃত সমস্ত পুরনো জিনিসপত্র সংগ্রহ করে রাখা রয়েছে পর্যটকদের জন্য।
দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ নাকি আগে এই গ্রামে আসতেন কালা জাদু শেখার জন্য। ম্যাজিসিয়ান পিসি সরকারও বলেছিলেন, তাঁর জীবনে এই গ্রামের প্রভাব রয়েছে।
এই গ্রামে কালা জাদু নিয়ে নানা মিথ রয়েছে। শোনা যায়, যে কোনও সময়ে মানুষকে অন্য কোনও প্রাণীতে পরিণত করে দিতে পারতেন ওঝারা। ফুলকে পরিণত করে দিতে পারতেন কোনও প্রাণীতে! এমনকি কারও কোনও জিনিস হারিয়ে গেলে নাকি জলে ফুল ভাসিয়ে বলে দিতে পারতেন ঠিক কোথায় গেলে পাওয়া যাবে সেটা।
এমনকি, অনেক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ওঝারা নাকি চোখের সামনে নিজেদের গায়েব করেও দিতে পারতেন, মন্ত্র পাঠ করে হিংস্র বাঘকেও বশে আনতে পারতেন তাঁরা, শোনা যায় এমনই।
গ্রামবাসীদের বিশ্বাস ছিল যে, ওঝারা ভূত পুষতেন। আর সেই ভূতই তার ক্ষমতাবলে এই সব অসাধ্য সাধন করে দেখাত।
কালা জাদুর রমরমা এই গ্রামে এতটাই ছিল যে, গ্রামের প্রতিটা মানুষ এই জাদু বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। বংশ পরম্পরায় জাদুবিদ্যার পাঠ দেওয়া হত। আশেপাশের গ্রাম থেকে মানুষেরা ছুটে আসতেন যে কোনও সমস্যার সমাধানে। এটাই হয়ে উঠেছিল জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়।
বর্তমানে এই গ্রামে ১০০ জন ম্যাজিসিয়ান রয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই বয়স্ক। নব প্রজন্মের প্রত্যেকেও এই কালা জাদু জানেন। তবে তাঁদের মধ্যে কালা জাদুর প্রতি আগ্রহ নাকি আগের থেকে কিছুটা কমেছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চাপে বর্তমানে তাঁদের অন্যান্য পেশাও আপন করে নিতে হচ্ছে।
কারণ, আগে গ্রামে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের এই ওঝাদের কাছেই নিয়ে আসা হত। কালা জাদু করে নাকি রোগ সারিয়ে তুলতেন ওঝারা। বিনিময়ে মিলত টাকা। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই রোগীদের চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যান। ফলে রোজগারের রাস্তা কমেছে ওঝাদের।