গালিব-বচ্চন টেনে মোদীকে খোঁচা রাহুলের

মির্জা গালিব থেকে বশির বদর হয়ে পিতৃবন্ধু বিগ বি! নোট বাতিলের জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করতে গিয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন অস্ত্রে শান দিচ্ছেন রাহুল গাঁধী। গত কাল উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচের সভায় মোদীর বিদ্রুপের পাল্টা দিতে উদ্ধৃত করেছিলেন মির্জা গালিবের কবিতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১১
Share:

আলমোড়ার সভায় রাহুল গাঁধী। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

মির্জা গালিব থেকে বশির বদর হয়ে পিতৃবন্ধু বিগ বি!

Advertisement

নোট বাতিলের জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করতে গিয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন অস্ত্রে শান দিচ্ছেন রাহুল গাঁধী। গত কাল উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচের সভায় মোদীর বিদ্রুপের পাল্টা দিতে উদ্ধৃত করেছিলেন মির্জা গালিবের কবিতা। আজ উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ায় মোদীর বিরুদ্ধে দেশের ৯৯ শতাংশ ‘গরিব এবং সৎ’ লোকের অর্থ লুঠ করার অভিযোগ এনে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ফিল্মের একটি গান সামান্য বদলে বললেন, ‘‘রাম রাম জপনা গরিব কা মাল আপনা!’’ তার পরেই উর্দু কবি বশির বদরকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘‘লোগ টুট যাতে হ্যায় এক ঘর বানানে মে, তুম তরস নেহি খাতে বস্তিয়ো জ্বালানে মে।’’

কখনও গান, কখনও কবিতা! পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এই রাহুলকে নিয়ে উদ্বেগে বিজেপি। অন্য দিকে কংগ্রেসে স্বস্তির হাওয়া। রাহুলের বাবা, প্রয়াত রাজীব গাঁধীর সঙ্গে অমিতাভ বচ্চনের ঘনিষ্ঠতা থাকলেও রাজীবের মৃত্যুর পর থেকে সেই সম্পর্কে বরফ জমতে শুরু করে। পরে তা তিক্ততায় পর্যবসিত হয়। এ দিন তাই রাহুলের মুখে অমিতাভের সিনেমার গান শুনে চমকে গিয়েছেন অনেকেই।

Advertisement

বাহরাইচের পরে আলমোড়ার সভাতেও রাহুল যে ভাবে বক্তৃতা করছেন, তাতে তিনি এক ঢিলে একাধিক পাখি মারার কৌশল নিয়েছেন বলেই ধারণা অনেকের। এক দিকে তিনি মোদীর গরিব-দরদী ভাবমূর্তিতে জল ঢালতে চেয়েছেন। অন্য দিকে সুকৌশলে রামের নাম তুলে বিজেপি নেতৃত্বকে খোঁচা দিয়েছেন। রাহুল সম্প্রতি অযোধ্যায় হনুমানগড়ি মন্দিরে গিয়েছিলেন। সে কারণেই তাঁর রাম নামের পিছনে নিজের নরম হিন্দুত্বকে তুলে ধরার চেষ্টাও দেখছেন অনেকে।

মোদীর বিরুদ্ধে রাহুল ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন দু’দিন আগে, বুধবার। তার পরের দিনই মোদী বারাণসী সফর করেছেন। সেখানে রাহুলকে নানা ভাবে উপহাস করেছেন, খোলা মাঠে নিজের টিফিন হাতে নিয়ে গুটিকয়েক দলনেতার সঙ্গে ‘লাঞ্চ পে চর্চা’-ও করেছেন। আজ সকালে বিজ্ঞান ভবনের গোয়েন্দা ব্যুরোর বার্ষিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়েছেন। আগামিকাল মুম্বই যাবেন। কিন্তু রাহুলের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি এখনও নীরব।

আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছেন রাহুল। এক হাতে সহারা, অন্য হাতে আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর কাগজ নিয়ে আজ আলমোড়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোদীর বিরুদ্ধে ফের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘‘আমাকে নিয়ে যত খুশি মজা করুন, কিন্তু যুবশক্তির সামনে জবাব দিন।’’

এখানেই থামেননি তিনি। বিজেপি তথা মোদীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ৭০ বছর ধরে দেশ শাসন করার নামে নেহরু-গাঁধী পরিবারই যাবতীয় দুর্নীতি করেছে। বিদেশি ব্যাঙ্কে গাঁধী পরিবারের কালো টাকা আছে বলেও অভিযোগ বিজেপির। এ দিন রাহুল বিজেপিকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘‘কালো টাকার কারবারিদের নাম মোদী সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে সুইৎজারল্যান্ড সরকার। সেই সব চোরেদের নাম কেন লোকসভা বা রাজ্যসভায় বলছেন না? আমরা জানতে চাই, সেই চোরেরা কারা?’’ শনিবার রাহুলের সভা হিমাচল প্রদেশে। সেখানে তিনি আরও সুর চড়াবেন বলেই আশা কংগ্রেসের।

এ দিনের সভায় উত্তরাখণ্ডের পর্যটন শিল্পের বেহাল দশাকে নোট বাতিলের ফল হিসেবে তুলে ধরে রাহুল পৌঁছে গিয়েছেন জাতীয় রাজনীতিতে। রাহুলের কথায়, ‘‘নোট বাতিলের জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গরিবরা। কৃষক, শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যেন পরমাণু বোমা দাগা হল! সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তরাখণ্ড।’’ একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, কালো টাকা উদ্ধারের নামে নোট বাতিল আসলে ‘সংগঠিত লুঠ’ এবং ‘ডাকাতি’।

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে গরিবের মসিহা হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন মোদী। আর মোদীর সেই ভাবমূর্তিতে ভর করে উত্তরপ্রদেশের ভোট যুদ্ধে উতরে যাওয়ার অঙ্ক কষেছিল বিজেপি। রাহুল সুকৌশলে এই জায়গাটিতেই আঘাত করে যাচ্ছেন। আজ বক্তৃতায় বারবার গরিবের অর্থ লুঠ হওয়ার বিষয়টিকে তুলে এনেছেন তিনি। রাহুলের কথায়, ‘‘মোদীজি দেশের ১% অতি বড়লোক এবং ৯৯% সৎ মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছেন। এই নীতি কালো টাকার বিরুদ্ধে অভিযান নয়।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘মোদীর বন্ধু’ তথা দেশের ৫০ জন ধনী শিল্পপতি ব্যাঙ্কের ৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ শোধ করেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement