স্থানীয় স্তরে আবেদন-নিবেদন করে লাভ হয়নি। ছোট্ট সম্প্রদায়ের কথা কানে তোলেননি রাজ্যের নেতারা। আদতে শ্যামদেশের বাসিন্দা ‘মান তাই’ সম্প্রদায়ের নেতারা কোথাও শুনেছিলেন— মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকর কাউকে খালি হাতে ফেরান না। কপাল ঠুকে তাঁর নামেই একটি স্মারকপত্র পাঠিয়ে দেন তাঁরা।
ফলও মিলল তাতে।
প্রায় ৭ মাস পর সচিনের দফতর থেকে জেলাশাসকের দফতরে চিঠি আসে। তাতে ওই সম্প্রদায়ের উন্নয়নে ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সচিন। ১ অক্টোবর আইএসএল প্রতিযোগিতার উদ্বোধন হবে গুয়াহাটির ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামে। উদ্বোধনী ম্যাচে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসির সঙ্গে সচিনের কেরল ব্লাস্টার্সের খেলা। মাঠে থাকার কথা অমিতাভ বচ্চন ও সচিনের। কৃতজ্ঞ মান তাইদের আশা, সচিন ওই সময় সময় বের করে কার্বি আংলং এলে তাঁর টাকায় তৈরি হওয়া ছাত্রাবাস দেখে যেতে পারবেন।
ডিফুর বিধায়ক সুম রংহাং ও বৈঠালাংশুর বিধায়ক মানসিং রংপি জানান, আদতে তাইল্যান্ড থেকে আসা ছ’টি তাই জনগোষ্ঠীর অন্যতম মান তাইরা বৌদ্ধ ধর্মের উপাসক। অসমের মানুষ তাঁদের ‘শ্যামদেশীয়’ও বলেন। তবে তাঁরা কিন্তু আহোম নন। মান তাইদের আচার ও ভাষার সঙ্গে বর্তমান তাইদের মিল অনেকটাই। তাঁরা তাই আইতন ভাষা বলেন। ষোড়শ শতকে স্যু-কা-ফার সঙ্গেই তাইরা পাটকাই পাহাড় পেরিয়ে উজানি অসমে ঢোকেন। বর্তমানে অসমের কার্বি আংলং, যোরহাট, গোলাঘাটের বিভিন্ন অংশ, অরুণাচল, গারো পাহাড়, নাগাল্যান্ডে তাঁদের বাস। কার্বি আংলংয়ের বোকাজানে থাকা মান তাইরা সংখ্যা আট থেকে ১০ হাজার। সব মিলিয়ে উত্তর-পূর্বে তাইদের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার মতো। এর মধ্যে ১৫ হাজার এখনও মান তাই ভাষা ব্যবহার করেন। ক্রমেই ভাষাটি বিলুপ্ত হয়ে আসছে।
এ হেন মান তাইদের একটি বসতি আছে পূর্ব কার্বি আংলংয়ের মাঞ্জায়। সেখানে তাঁদের বৌদ্ধ মন্দিরও রয়েছে। মান তাই সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের তরফে মান তাই জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ রাজ্যসভার সাংসদ সচিনকে স্মারকপত্র পাঠানো হয়। অগস্টের মাঝামাঝি জেলাশাসক মুকুল গগৈয়ের কাছে সাংসদের দফতর থেকে চিঠি আসে। তাতে জানানো হয়, সচিন ওই ছোট্ট জনগোষ্ঠী এবং লুপ্তপ্রায় ভাষার উন্নয়নে ২৫ লক্ষ টাকা দিচ্ছেন। আসে চেকও। জেলাশাসক জানান, ওই টাকা মান তাই সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ক্রীড়াবিদ বিষ্ণুরাম নুনিসা, বিধায়ক সুম রংহাংরা সচিনের বদান্যতার প্রশংসা করে জানান, সাংসদ যে অনামা একটি জনগোষ্ঠীর আবেদনে সাড়া দিয়ে এ ভাবে টাকা পাঠাবেন, তা কেউ ভাবতে পারেননি। বিকাশ কেন্দ্রের অন্যতম উপদেষ্টা ও অসম সরকারের কৃষি বিভাগের অন্যতম কর্তা ভোগেশ্বর শ্যাম জানান, মাঞ্জায় বৌদ্ধমন্দির পরিচালন সমিতির হাতে ওই টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। তা দিয়ে সেখানে তৈরি হচ্ছে একটি ছাত্রাবাস। জমি দেখার কাজ শেষ। ভিতও হয়ে গিয়েছে। মান তাইদের আশা, অক্টোবরে গুয়াহাটিতে এসে সচিন কার্বি আংলং ঘুরে গেলে মান তাইদের কথা গোটা ভারত জানতে পারবে।