যোগী আদিত্য়নাথ। ফাইল ছবি।
গত সোমবার বুলন্দশহরে হিংসার ঘটনায় খুন হয়েছিলেন পুলিশ ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংহ। তার চার দিন পর প্রথম মুখ খুলে ওই ঘটনাকে 'নিছকই দুর্ঘটনা' বললেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্য়মন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর কথায়, ''কোনও গণপিটুনির ঘটনা ঘটনা ঘটেনি বুলন্দশহরে। ওটা নিছকই একটি দুর্ঘটনা।
ঘটনার দিন আদিত্য়নাথ অন্যত্র একটি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে তন্ময় হয়ে ছিলেন বলে আগেই সমালোচনা হয়েছিল সর্বত্র। পরে তার জেরে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। বুলন্দশহরের পুলিশ তার প্রেক্ষিতে গ্রেফতার করে তিন জনকে। তবে ওই সময় মূল অভিযুক্ত হিসাবে যাঁর নাম রটেছিল, বজরঙ্গ দলের সেই কর্মী যোগেশ রাজ পুলিশের খাতায় 'ফেরার' থাকলেও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ভিডিয়ো মেসেজে জানান, তিনি ওই সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ছিলেন থানায়।
বুলন্দশহরের ঘটনার পর থেকেই নানা মহলে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তা হল, বুলন্দশহরের পুলিশকর্তা সুবোধ কুমার সিংহকে কি তা হলে কি রাজনীতির শিকার হতে হল ? গত ৩ ডিসেম্বরের হিংসার ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই নানা মহলে এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে ক’দিন ধরেই। সম্প্রতি একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসায়সেই প্রশ্নচিহ্নটাকে আরও বড় করে তুলল!
সুবোধের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে সাংসদ ভোলা সিংহকে স্থানীয় বিজেপি নেতাদের লেখা একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসে।সেই চিঠিতে সুবোধ কুমারের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জানানো হয়। বিজেপি নেতা ও হিন্দু সংগঠনগুলোর অভিযোগ ছিল, সুবোধের বাড়াবাড়ি এবং একরোখা মনোভাবের জন্য তারা কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারছেন না। কোনও ধর্মীয় সভা করতে গেলেই সুবোধ নাকি বাধা হয়ে দাঁড়াতেন। আর তাঁর এই ভূমিকা নিয়েই বিজেপি নেতা এবং হিন্দু সংগঠনগুলোর সদস্যদের মধ্যে একটা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল।
শুধু তাই নয়, গরু চুরি এবং গোহত্যার মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সুবোধ ‘ঠিক মতো পদক্ষেপ’ করতেন না বলে অভিযোগ। সুবোধ-সহ কয়েক জন পুলিশ অফিসারকে বদলির পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আর্জি জানানো হয় সেই চিঠিতে। গত ১ সেপ্টেম্বর বুলন্দশহরের সাংসদ ভোলা সিংহের কাছে বিজেপি নেতাদের লেখা সেই চিঠি প্রকাশ্যে আসে। শহরে বিজেপির সাধারণ সম্পাদকসঞ্জয় শ্রোতিয়া চিঠি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে নেন।স্থানীয় ব্লক প্রমুখ প্রমেন্দ্র যাদব, প্রাক্তন কর্পোরেটর মনোজ ত্যাগী-সহ ৬ বিজেপি সদস্য সেই চিঠিতে সই করেন বলেও দাবি শ্রোতিয়ার। শ্রোতিয়া জানিয়েছেন, বেশ কিছু কারণ যেগুলো সুবোধের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল। যে বিষয়টা তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল তা হল হিন্দুদের ধর্মীয় সভা আটকে দেওয়া। বিজেপি নেতাদের লেখা এই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরই প্রশ্নটা আরও জোরালো হচ্ছে যে, তা হলে কী সুবোধের এই মৃত্যু পরিকল্পনামাফিক?
আরও পড়ুন: ‘যথেষ্ট হয়েছে, গণপ্রহারের সংস্কৃতি এ বার বন্ধ করুন’, যোগীর সঙ্গে সাক্ষাতে অনুরোধ ইনস্পেক্টরের ছেলের
একটা মাত্র গুজব। আর সেই গুজবের জেরে জ্বলে উঠেছিল বুলন্দশহর। হিংসায় মৃত্যু হয় সুবোধ কুমার সিংহের। তাঁর মাথায় গুলি লাগে। হিংসা ছড়ানো এবং সুবোধ কুমারকে খুনের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির যুব শাখার সদস্য শিখর আগরওয়ালের বিরুদ্ধে। ৮৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবারই একটি ভিডিয়ো সামনে আসে। সেখানেশিখরকে হুমকি দিয়ে বলতে দেখা যায়, “সুবোধকুমার দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসার ছিলেন। এলাকার সকলেই এ ব্যাপারটা জানতেন। তিনি হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করতেন বার বার। আমাকে গুলি করে মারার হুমকিও দেন ওই অফিসার।”
আরও পড়ুন: ‘বুলন্দশহরে গরু মারল কে, সেটাই বড় প্রশ্ন’, বললেন পুলিশকর্তা
দাদরির আকলাখ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছিলেন এই সুবোধ কুমার। ডাকাবুকো পুলিশ অফিসার হিসেবেও পরিচয় ছিল তাঁর। সুবোধের মৃত্যুর পরই তাঁর পরিবার অভিযোগ তোলে, আকলাখ মামলার তদন্তের জন্যই ষড়যন্ত্র করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। বুলন্দশহরের হিংসা, গুলিতে এক পুলিশ অফিসারের মৃত্যু এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রশ্ন তুলে যোগী আদিত্যনাথের প্রবল সমালোচনা হচ্ছে। এই হত্যার পিছনে রাজনৈতির ষড়যন্ত্রের প্রশ্নও উঠে এসেছে। বিজেপি নেতাদের লেখা এই চিঠি প্রকাশ্যে আসায় যোগী সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়ল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)