ভাট্টিয়ুরকাভু বিধানসভা আসনে জয়ী হলেন ভিকে প্রশান্ত।—ছবি ফেসবুক সৌজন্যে।
আসন জয়, ভোটের শতাংশ এবং মোট ভোটপ্রাপ্তি। সব অঙ্কেই যোগের হিসেব! লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের কয়েক মাসের মধ্যে কেরলে বিধানসভা উপনির্বাচনে হারানো জমি পুনরুদ্ধারের পথে এগোল বামেরা।
উপনির্বাচনে গত মাসেই পালা বিধানসভা কেন্দ্র জিতেছিল সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ। ওই বিধানসভা আসন তৈরি হওয়ার ৫৪ বছর পরে সেখানে এটাই বামেদের প্রথম জয়। সেই ধারারই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে কেরলের ভাট্টিয়ুরকাভু বিধানসভা আসন এ বার প্রথম ঘরে তুলল সিপিএম। সেই সঙ্গে কোন্নি আসন তাদের দখলে এল ২৩ বছর পরে। কেরলের যে পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ভোট গণনা হল বৃহস্পতিবার, তার মধ্যে সিপিএম ও কংগ্রেস জয়ী হয়েছে দু’টি করে আসনে। একটি আসন দখলে রেখেছে মুসলিম লিগ। আগের একটি এবং এ যাত্রায় আরও দু’টি আসনে বামেদের পক্ষে পালা-বদলের জেরে ১৪০ আসনের কেরল বিধানসভায় ক্ষমতাসীন এলডিএফের বিধায়ক-সংখ্যা বেড়ে হল ৯৩।
উপনির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে, যুযুধান সব শিবিরের মধ্যে সিপিএমই সর্বোচ্চ ৩১.৭% ভোট পেয়েছে। কংগ্রেসের ভোট ২৯.৮০%। কোনও আসন না জিতে তৃতীয় স্থানে শেষ করা বিজেপির প্রাপ্তি ২৩% ভোট। লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ২০টির মধ্যে ১৯টি আসনই জিতেছিল কংগ্রেস। সিপিএমের ঝুলিতে ছিল মাত্র একটি। এ বার উপনির্বাচনে কংগ্রেসকে যে দু’টি আসনে সিপিএম হারিয়েছে, সেখানে জয়ের ব্যবধান ১৪ হাজার এবং ১০ হাজার ভোট। আবার যে দু’টিতে কংগ্রেসের কাছে সিপিএম হেরেছে, সেখানে পরাজয় হয়েছে দু’হাজার ও সাড়ে তিন হাজার ভোটে। পাঁচ কেন্দ্রের মোট ভোটের হিসেব থেকে দেখা যাচ্ছে, সর্বোচ্চ ভোট বাম বাক্সেই পড়েছে।
শবরীমালা-কাণ্ডে বিতর্ক এবং হিন্দুত্ববাদীদের প্রচারের প্রেক্ষিতে লোকসভা ভোটে যে জমি হারাতে হয়েছিল, উপনির্বাচন থেকে তার কিছুটা হলেও ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত মিলছে বলে মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। বিশেষত, কোন্নি আসন জেতায় শবরীমালার জেলা পাতানামতিট্টায় পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রই এখন বামেদের দখলে এল। এবং কেরলের এই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রভাব বাংলাতেও টেনে আনতে উৎসাহী তাঁরা। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘সাম্প্রদায়িক শক্তি যে অপরাজেয় নয়, এই ফলাফলে তার ইঙ্গিত আছে। মানুষের প্রকৃত সমস্যা নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থাকলে চাকা ঘোরানো সম্ভব।’’ এই সঙ্গে মহারাষ্ট্রের ডহাণু আসন ফিরে পাওয়াও সিপিএম নেতৃত্বের কাছে আশার খবর।
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের মতে, ধর্ম ও জাত-পাতের অঙ্ক এ বার আর কাজ করেনি। বামেদের ভোট তাই বেড়েছে। আর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের রমেশ চেন্নিথালা মেনে নিচ্ছেন, দখলে থাকা চারটির মধ্যে দু’টি আসন হাতছাড়া হওয়ায় তাঁদের গভীর বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রসঙ্গত, কংগ্রেসের ভাট্টিয়ুরকাভু ও কোন্নি যেমন সিপিএম কেড়ে নিয়েছে, তেমনই সিপিএমের দখলে থাকা আরুর আসনটি এ বার কংগ্রেস জিতে নিয়েছে।