রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
বিজেপি-আরএসএসকে যাঁরা ভয় পান না, তাঁদের কংগ্রেসে নিয়ে আসতে হবে। যাঁরা কংগ্রেসে থেকেও ভয় পাচ্ছেন, তাঁদের কংগ্রেসে দরকার নেই বলে জানিয়ে দিলেন রাহুল গাঁধী। দলের মধ্যে রাহুলের এই ‘শুদ্ধকরণ’-এর ডাক প্রশান্ত কিশোরের কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনাও নতুন করে উস্কে দিল।
কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মীর সঙ্গে আজ বৈঠক করেন রাহুল। বলেন, ‘‘আমাদের নির্ভীক লোক জন দরকার। এটাই আমাদের মতাদর্শ।’’ এর পরেই সোজাসাপটা ভাষায় তিনি দলের কর্মীদের বলেন, ‘‘অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁরা আরএসএস-কে ভয় পান না। তাঁরা আমাদেরই লোক। তাঁদের দলের ভিতরে নিয়ে আসতে হবে। আর আমাদের মধ্যে যাঁরা ভয় পাচ্ছেন, তাঁদের বলে দিতে হবে, যাও ভাই, পালাও, তোমরা আরএসএসের লোক। তোমরা ভোগ করো, যাও, তোমাদের দরকার নেই।’’ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার নাম করে তাঁর মতো দল ছেড়ে চলে যাওয়া নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে রাহুল বলেন, ‘‘যাঁরা ভয় পেয়ে গিয়েছে, তাঁরাই আরএসএসে চলে গিয়েছে। ওঁদের ভয় ছিল, মহল হাতছাড়া হয়ে যাবে। যাঁরা ভয় পাননি, তাঁরা কংগ্রেসে থাকবেন।’’
চলতি সপ্তাহেই ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে রাহুল-প্রিয়ঙ্কার বৈঠক হয়েছে। প্রশান্ত কিশোর ওরফে পিকে কংগ্রেসকে চাঙ্গা করার ‘চ্যালেঞ্জ’ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ায় গাঁধী পরিবার তাঁকে কংগ্রেসে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। তবে পিকে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে গুরুদায়িত্ব পেলে তাঁকে দলের পুরনো নেতারা কতখানি মেনে নেবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তারই মধ্যে আজ রাহুলের মন্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, রাহুল কি পিকে-র মতো বিজেপিকে হারানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে তৈরি ব্যক্তিদেরই দলে টানার দিকে ইঙ্গিত করলেন?
আরএসএসকে ভয় পাওয়ার কথা বলেও রাহুল জ্যোতিরাদিত্যের মতো দলত্যাগী নেতাদের সঙ্গে প্রবীণ নেতাদেরও নিশানা করলেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ ২০১৯-এ ভোটে হারের পরেই রাহুল অভিযোগ তুলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি-আরএসএস-কে নিশানা করার ক্ষেত্রে তিনি দলের সব নেতাকে পাশে পাননি। মোদীকে ব্যক্তিগত নিশানা করা ঠিক রণকৌশল কি না, তা নিয়েও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে সংশয় ছিল। এখন আবার তথাকথিত ‘জি-২৩ গোষ্ঠীর’ বিক্ষুব্ধ নেতা, রাজস্থানে সচিন পাইলট, পঞ্জাবে নভজ্যোত সিংহ সিধুর মতো নেতারা দলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব চাইছেন। রাহুল আজ জ্যোতিরাদিত্য, জিতিন প্রসাদের মতো কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া নেতাদের নিশানা করার পাশাপাশি কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদেরও বার্তা দিলেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
বিজেপির আইটি সেলের মোকাবিলাতেই কংগ্রেস এখন নিজের সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগ ঢেলে সাজিয়েছে। রাহুল আজ কংগ্রেসের তরুণ কর্মীদের বলেন, ‘‘আপনাদের ভয় দেখানোর অনেক চেষ্টা হবে। ভয় পাবেন না। আমাকেও আপনারা ভয় পেতে দেখবেন না। আমার সঙ্গেও কথা বলতে ভয় পাবেন না। কারণ আপনারা নিজের ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছেন।’’ বিভিন্ন ক্ষেত্রের ১০ জন তরুণ কর্মীর সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলেন রাহুল। তাঁদের এক জন সদ্য নিজের বাবাকে হারিয়েছেন জানানোয় রাহুল বলেন, ‘‘আমি আপনার কষ্ট বুঝতে পারি। আমি নিজেও বাবাকে হারিয়েছি।’’