রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ ফেরানো নিয়ে আগামিকালই লোকসভার স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা কংগ্রেসের। কিন্তু অবিলম্বে রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানো না হলে আবার আদালতে যাওয়ার রাস্তা খোলা রাখছেন কংগ্রেসের আইনজীবীরা।
রাহুলকে মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে সুরাতের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁকে দু’বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। তার জেরে ওই কংগ্রেস নেতার লোকসভার সাংসদ পদ খারিজ হয়। সুপ্রিম কোর্ট ওই রায়ে স্থগিতাদেশ জারির পরে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এখনও রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানো হয়নি। কংগ্রেস নেতৃত্বের আশা, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা আগামিকাল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরি করা হলে কংগ্রেসের আইনজীবীরা ফের শীর্ষ আদালতে যাবেন। কংগ্রেসের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছে, গত জানুয়ারিতে লক্ষদ্বীপের এনসিপি সাংসদ মহম্মদ ফয়জল খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়েছিল। কেরল হাই কোর্ট তাতে স্থগিতাদেশ জারি করলেও স্পিকার তৎক্ষণাৎ তাঁর সাংসদ পদ ফেরাননি। ফয়জল সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তিন মাস পরে শীর্ষ আদালতে শুনানির ঠিক আগে সাংসদ পদ ফেরানো হয়। গত কাল রাতে রাহুল কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ও তাঁর সহকারী আইনজীবীদের সঙ্গে নৈশভোজ করেছেন। সুপ্রিম কোর্টে স্থগিতাদেশ মেলার খুশিতেই নৈশভোজের আয়োজন হয়েছিল।
লোকসভার সচিবালয় সূত্রের খবর, শুক্রবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের লিখিত রায় এসেছে। শনি ও রবিবার সংসদ বন্ধ থাকে। আজ স্পিকার দিল্লির বাইরে ছিলেন। আগামিকাল তিনি এই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। কাগজপত্র প্রায় সব তৈরিই রয়েছে। শুধু সইয়ের অপেক্ষা। আগামিকালই তা হয়ে যাওয়া উচিত।
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী স্পিকারকে গত কাল চিঠি লিখে রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানোর আর্জি জানিয়েছিলেন। কংগ্রেস চাপ বাড়াতে আজ দু’টি দাবি তুলেছে— এক, সুরাতের আদালতে রাহুল দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়েছিল। একই দ্রুততায় সেই সাংসদ পদ ফেরানো হোক। দুই, যে দ্রুততায় রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হয়েছিল, সেই দ্রুততাতেই বিজেপি সাংসদ রামশঙ্কর কাঠেরিয়ার সাংসদ পদ খারিজ হোক। গত কাল উত্তরপ্রদেশের আগরার এমপি-এমএলএ কোর্ট কাঠেরিয়া দাঙ্গা-হামলার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে দু’বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। কাঠেরিয়ার বিরুদ্ধে দলবল নিয়ে আগরার সাকেত মলে একটি বেসরকারি সংস্থার দফতরে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ছিল। কংগ্রেসের প্রশ্ন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিজেপি সাংসদের সদস্যপদ খারিজ হচ্ছে না কেন! লোকসভায় সচিবালয়ের আধিকারিকেরা এ ক্ষেত্রেও শনি-রবি ছুটির যুক্তি দিচ্ছেন।
সাংসদ পদ খারিজের সঙ্গে সঙ্গে রাহুলের কাছে সরকারি বাংলো খালি করারও নোটিস চলে এসেছিল। তিনি তুঘলক লেনের বাংলো ছেড়ে আপাতত ১০ জনপথে সনিয়া গান্ধীর সরকারি বাসভবনে মায়ের সঙ্গে রয়েছেন। মাঝে নিজামুদ্দিনে প্রয়াত শীলা দীক্ষিতের পুরনো ফ্ল্যাটে রাহুল থাকার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে তা চূড়ান্ত হয়নি। সাংসদ পদ ফিরলে কংগ্রেস শিবির থেকে রাহুলের সরকারি বাংলো ফেরানোর দাবিও উঠবে।
রাহুলের সাংসদ পদ না ফেরানো নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তাঁর টুইট, ‘রাহুল গান্ধীকে বেআইনি ভাবে দোষী সাব্যস্ত করার উপরে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের পরে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি কেটে গিয়েছে। লোকসভা সচিবালয়কে
অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। যে কোনও বিলম্ব অন্যায্য এবং সর্বোচ্চ আদালতকে অবজ্ঞা করা’।