জমি আইনের ভার রাজ্যের ঘাড়েই চাপাচ্ছে কেন্দ্র?

ইঙ্গিতটা আগেই দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এখন পরিষ্কার যে জমি আইন সংস্কারের ভার কার্যত রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক পরিত্রাণের পথ খুঁজতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কী ভাবে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৫ ২০:৫৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

ইঙ্গিতটা আগেই দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এখন পরিষ্কার যে জমি আইন সংস্কারের ভার কার্যত রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক পরিত্রাণের পথ খুঁজতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

Advertisement

কী ভাবে? বর্তমান জমি আইন রাতারাতি সংশোধন করে শিল্প করিডর থেকে শুরু করে পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের অধিকার সরকারের হাতে আনতে চেয়েছিলেন মোদী-জেটলি। সে ক্ষেত্রে কৃষকদের প্রাক সম্মতি নেওয়া ও সামাজিক প্রভাব নিরীক্ষার শর্তও অধ্যাদেশ জারি করে তুলে দিয়েছিল সরকার। মোদীর জমি নীতি নিয়ে বিরোধীদের মূল বিরোধিতার বিষয় ছিল সেটাই। এবং তা হাতিয়ার করে ‘স্যুট বুটের সরকার’ বলে লাগাতার মোদীকে কটাক্ষ করে রাজনৈতিক জমি উদ্ধারে নেমে পড়েছিলেন রাহুল গাঁধী। বিরোধিতা শুরু হয়েছিল বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের ভিতর থেকেও। সংস্কারের সাহসিকতা দেখাতে এ ভাবে রাজনৈতিক হাত পোড়ার আশঙ্কাতেই পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। গতকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এ ব্যাপারে সবিস্তার আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী স্থির করেছেন, বর্তমানে যে সংশোধন প্রস্তাব করেছে কেন্দ্র তা রাজ্যের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। কোনও রাজ্য চাইলে কৃষকদের প্রাক সম্মতি নিয়ে জমি অধিগ্রহণ করতেই পারে। সামাজিক প্রভাব নিরীক্ষার বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ইচ্ছা অনিচ্ছা তথা নীতির ওপর নির্ভর করবে। কেন্দ্রের আইন কেবল একটি আদর্শ আইন হিসাবে থেকে যাবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী আজ বলেন,‘‘যে রাজ্য দ্রুত উন্নয়ন চাইবে তারা এই আইন অনুসরণ করবে, যারা চাইবে না তারা অনুসরণ নাও করতে পারে।’’

বর্তমান জমি আইনে যে সংশোধন প্রস্তাবগুলি করেছিল সরকার তা এখন সংসদের যৌথ কমিটির বিচারাধীন। ৩ অগস্ট ওই কমিটি চূড়ান্ত সুপারিশ পেশ করবে। সরকারের শীর্ষ সূত্র বলছে, কমিটির সুপারিশ ও জমি আইন সংশোধন নিয়ে সম্প্রতি নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীদের দেওয়া পরামর্শ মেনে সরকার নিজেই ফের একটি সংশোধন প্রস্তাব আনবে। তাতে সুস্পষ্ট ভাবে বলা হবে, ‘‘কেন্দ্রের আইনটি রাজ্যকে পথ দেখাবে মাত্র। সংবিধানের ২৫৪ (২) ধারা অনুযায়ী রাজ্যগুলি তাদের পৃথক জমি আইন প্রনয়ণ করতে পারে।’’ সূত্রের মতে, শিল্প করিডর নির্মাণের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের এক্তিয়ার সরকারের হাতে রাখার প্রস্তাবও প্রত্যাহার করে নেওয়া হতে পারে। কারণ শিল্প করিডরের নামে জাতীয় সড়কের উভয় পাশে এক কিলোমিটার করে পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে আর এস এসও।

Advertisement

মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ সারির সদস্যের কথায়, আসলে জমি আইন সংশোধন করতে গিয়ে মস্ত রাজনৈতিক ভুল করেছে সরকার। এমনিতেই তামিলনাড়ু, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে পৃথক জমি আইন রয়েছে। ইউ পি এ জমানায় পাশ হওয়া জমি আইনটি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারও মানে না। তাই জাতীয় স্তরে আইন সংশোধন না করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে জমি নীতির সংস্কার করলেই ল্যাঠা চুকে যেত। এখন সেই ভুলটাই শুধরোনোর চেষ্টা হচ্ছে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, সরকারের এই সংশোধন প্রস্তাবও কি মানবে কংগ্রেস তথা বিরোধীরা? জবাবে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘এই সংশোধন মানারও প্রশ্ন ওঠে না। কারণ, ব্যাপারটা এমন নয় যে কংগ্রেস শুধু কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির ব্যাপারে চিন্তিত। এটা গোটা দেশের কৃষকদের অধিকারের বিষয়। কেন্দ্র এই আইন পাশ করে গুজরাত, রাজস্থান, হরিয়ানা, পঞ্জাব, ছত্তীসগড়, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলির কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে জমি কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছে। ওই রাজ্যগুলিতে সামাজিক ও শিল্প পরিকাঠামো গড়ে তোলার নামে কৃষকদের বিনা সম্মতিতে তাদের জমি নিয়ে নেওয়া হবে। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনও সামাজিক প্রভাব নিরীক্ষাও হবে না। এই প্রস্তাব কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’’ সরকারের এই নতুন প্রস্তাব বাকি আঞ্চলিক দলগুলি কী ভাবে দেখবে সেও দেখার। কংগ্রেসের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস, সপা, বসপা ও বামেরা এই প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করলে সংসদে নতুন সংশোধন প্রস্তাবও পাশ করানো মুশকিল।

তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মোদ্দা বিষয় হল, জমি আইন সংশোধন থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে দিক থেকে হয়তো নতুন সংশোধন প্রস্তাব আনাটা প্রথম ধাপ। এও হতে পারে পরে তার থেকেও পিছিয়ে আসবে কেন্দ্র!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement