—ফাইল চিত্র।
‘উপদ্রুত’ কাশ্মীর থেকে আলাদা হতে পেরে উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভেঙেছিল। কিন্তু দু’বছর পেরোতে না পেরোতেই অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত লাদাখে। আলাদা রাজ্যের মর্যাদা পেতে এ বার মরিয়া হয়ে উঠল তারা। এ নিয়ে কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করতে মুসলিম অধ্যুষিত কার্গিলের সঙ্গে হাত মেলালো তারা। এ নিয়ে ১ অগস্ট জরুরি বৈঠক করেন দুই এলাকার রাজনীতিকরা। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা সর্বসম্মত ভাবে সেখানে খারিজ করেন তাঁরা। বরং আালাদা পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা-সহ অন্যান্য দাবিদাওয়া নিয়ে দিল্লিতে দরবারের জন্য একমত হন সকলে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতারাও। তাঁরাও আলাদ রাজ্যের দাবি সমর্থন করেন।
২০১৯ সালের ৪ অগস্ট পর্যন্ত লাদাখ জম্মু-কাশ্মীরের অংশ ছিল। কিন্তু ৫ অগস্ট সংবিধানে সংরক্ষিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজ করে কেন্দ্র। জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখকে ভেঙে পৃথক দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ঘোষণা করা হয়। তা নিয়ে যখন উত্তাল গোটা উপত্যকা, সেই সময় একেবারে বিপরীতধর্মী ছবি উঠে এসেছিল লাদাখ থেকে। লেহ-র রাস্তায় যেখানে উৎসবের আমেজ ধরা পড়েছিল, কার্গিলে ছিল শ্মশানের নীরবতা। পরবর্তী কালে সরকার বিরোধী বিক্ষোভও শুরু হয় সেখানে। কিন্তু গত দু’বছরে নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে এখন রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে একজোট লেহ এবং কার্গিল।
এর আগে, লেহ-তে বসবাসকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তকমা মেনে নিয়েছিলেন। শুধু পৃথক সংবিধানের দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে আলাদা রাজ্যের দাবিতে সরব হয়েছে লাদাখ। শুধু তাই নয়, রাজ্যের মর্যাদার পাশাপাশি জমি এবং চাকরির সুরক্ষাও চায় লাদাখ, যাতে বাইরের কেউ সেখানে এসে জমি কিনে বসবাস এবং চাকরি করতে না পারেন। বিশেষ মর্যাদা থাকাকালীন এই ব্যবস্থা বহাল ছিল।
এর আগে, গত বছর লাদাখে স্বায়ত্বশাসনের দাবি উঠেছিল। তাতে শামিল হয়েছিলেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ থুপস্তান ছেওয়াং, ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি)-র প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ তিকসে রিনোপচি, লাদাখ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি নওয়াং রিগজিন জোরা এবং লাদাখে বিজেপি নেতা তথা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মন্ত্রী চেরিং দোরজে। ১ অগস্টের বৈঠকের পর বিজেপি-র থুপস্তান ছেওয়াং জানান, লেহ-র অন্য বিজেপি নেতারাও আলাদা রাজ্যের মর্যাদার দাবিকে সমর্থন করছেন।
লাদাখের ৯৭ শতাংশ জনসংখ্যাই তফসিলি সম্প্রদায়ের। সেই কারণে সেখানে সংবিধানের ষষ্ঠ অনুসূচি মেনে লাদাখের উপজাতি অঞ্চলগুলিকে বিশেষ সংরক্ষণ এবং স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার সুপারিশ আগেই করেছে জাতীয় তফসিলি উপজাতি কমিশন। সেই দাবি পূরণের দাবিতে গত বছর সেপ্টেম্বরে লাদাখ স্বতন্ত্র পার্বত্য উন্নয়ন পরিষদকেও বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে বিজেপি, কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির নেতারা স্বাক্ষর করে। লাদাখে দলের নেতাদের এই অবস্থানে কার্যতই অস্বস্তিতে পড়েন বিজেপি-র দিল্লির নেতারা। তার মধ্যেই আলাদা রাজ্যের দাবি নতুন করে তাঁদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।