Kozhikode

সহ-পাইলট কি সতর্ক করেছিলেন শাঠেকে?

দীপক বসন্ত শাঠের সঙ্গে সে দিন ছিলেন সহকারি পাইলট দিল্লির যুবক অখিলেশ কুমার।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২০ ০৩:৫৯
Share:

দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই বিমান। ছবি: রয়টার্স

আফ্রিকার ঠিক পশ্চিম ভাগে, অতলান্তিকের উপরে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম দ্বীপ টেনেরিফ। স্পেনের অধীনে। আজ থেকে ৪৩ বছর আগে, সেই টেনেরিফ দ্বীপের একমাত্র বিমানবন্দরে রানওয়ের উপরে ভুল বোঝাবুঝির কারণে দুটি বড় বোয়িং ৭৪৭ জাম্বো বিমান মুখোমুখি চলে এসেছিল। ১৯৭৭ সালের ২৭ মার্চ প্যান-আম এবং কেএলএম-এর দুই বিমানের সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল ৫৮৩ জনের। বিমান পরিবহণের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত একেই সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হিসেবে ধরা হয়।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানতে পারেন, কেএলএম-এর মুখ্য পাইলট মনে করেছিলেন, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) তাঁকে ওড়ার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এটিসি তখনও সেই অনুমতি দেয়নি। তদন্তে জানা যায়, তাঁরা যে ভুল করছেন, তা ওই বিমানের মুখ্য পাইলটকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন সহ-পাইলট। কিন্তু, সহ-পাইলটের বক্তব্যে কর্ণপাত করেননি মুখ্য পাইলট।

২০১০ সালে মেঙ্গালুরু বিমানবন্দরেও এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিমান দুবাই থেকে এসে নামার সময়ে ভেঙে পড়েছিল এবং যাত্রী-সহ ১৫৮ জন মারা গিয়েছিলেন। সেখানেও মুখ্য পাইলট ব্রিটিশ নাগরিক ক্যাপ্টেন গ্লুসিকা নামতে গিয়ে ভুল করেছিলেন বলে তদন্তে জানা যায়। সে দিনও সতর্ক করেছিলেন সহ-পাইলট হরবিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া। একবার নয়, তিন বার সতর্ক করেছিলেন তিনি। কিন্তু, মুখ্য পাইলট তাঁর কথা না শুনেই, রানওয়ের যেখানে নামার কথা তা অনেকটা ছাড়িয়ে গিয়ে নামেন। শেষ মুহূর্তে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বিমানকে আবার উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: পানিহাটিতে দোকান ও বাজারের সময় ভাগ

উড়ান সংস্থা, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আধিকারিকেরা, অভিজ্ঞ পাইলট এবং বিমান পরিবহণের বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখ্য পাইলটের সঙ্গে সহকারি পাইলটের এই সমন্বয় নিয়ে চিরকালীন সমস্যা রয়েছে। টেনেরিফ দ্বীপের ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরে ‘ককপিট রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি বিষয় তৈরি হয় এবং সেটা নিয়মিত পাইলটদের পড়ানোও হয়।

সম্প্রতি কেরলের কোঝিকোড়ে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও সেই সমন্বয়ের বিষয়টি উঠে আসছে। কারণ, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে ৭ অগস্ট সন্ধ্যায় প্রথমবার পূর্ব দিক থেকে নামতে এসেও নামতে পারেনি বিমানটি। দীপক বসন্ত শাঠের সঙ্গে সে দিন ছিলেন সহকারি পাইলট দিল্লির যুবক অখিলেশ কুমার। সে দিন ওই বিমান নামার প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে বেঙ্গালুরু থেকে এসে ইন্ডিগোর এটিআর বিমানেরও কোঝিকোড়ে নামতে সমস্যা হয়েছিল। সে-ও প্রথমে পূর্ব দিক থেকে নামার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পশ্চিম দিক থেকে নেমেছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যাপ্টেন দীপক দ্বিতীয়বার নামার সময়ে হিসেবে যদি ভুলই করে থাকেন, তা হলে তা অখিলেশের নজরে পড়ার কথা। তবে কি মেঙ্গালুরুর মতো তিনিও সতর্ক করেছিলেন তাঁর সিনিয়রকে? উত্তর পাওয়া যাবে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ডি-কোড করলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, পাশে বসা সিনিয়র ভুল করলেও তাঁকে শুধরে দেওয়ার সাহস পান না বেশিরভাগ সহ-পাইলট। উড়ান সংস্থার এক কর্তার কথায়, “এটা যে কোনও পেশাতেই হয়। যেখানে খুব অভিজ্ঞ ও সিনিয়রের সঙ্গে একজন জুনিয়র কাজ করছেন, সেখানে সিনিয়র কিছু ভুল করলে জুনিয়র তা দেখিয়ে দিলে সিনিয়রের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। সেটা বেশিরভাগ সময়েই সিনিয়র মেনে নিতে পারেন না। কিন্তু, ককপিটের সিদ্ধান্তের উপরে মানুষের বাঁচা-মরা জড়িত থাকে।”

ককপিট রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট পড়ান এমন এক সিনিয়র পাইলটের কথায়, “ভীষণ ভারসাম্য রেখে বোঝাতে হয়। জুনিয়রদের একেবার সব স্বাধীনতা দিয়ে দিলে, প্রতি মুহূর্তে তিনি কাজে বাধা দিতে পারেন। আবার সিনিয়র ভুল করলে তা ধরিয়ে দেওয়ার স্বাধীনতাও থাকা উচিত।”

এই সূক্ষ্ম ভারসাম্য না থাকলে সমস্যা অবধারিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement