Air India Crash

অন্য বিমানবন্দরে কেন গেলেন না শাঠে

পাইলটদের বড় অংশের মতে, একটি বিমানবন্দরে প্রথম বার নামতে না পারলে, দ্বিতীয় বার একেবারে একশো শতাংশ নিশ্চিত না হলে সেই বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই করা উচিত নয়।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২০ ০৩:২০
Share:

ছবি: পিটিআই।

সাড়ে তিন টন জ্বালানি থাকা সত্ত্বেও কেন কোঝিকোড় থেকে বিমান নিয়ে দীপক বসন্ত শাঠে কাছের বিমানবন্দরে চলে গেলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পাইলটদের একাংশ। এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসও নিজেদের মতো তদন্ত শুরু করেছে। একই প্রশ্ন উঠছে সেখানেও। প্রসঙ্গত, এ দিনই দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য সরকারি ভাবে একটি দল তৈরি করা হয়েছে। তারা ৫ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।

Advertisement

পাইলটদের বড় অংশের মতে, একটি বিমানবন্দরে প্রথম বার নামতে না পারলে, দ্বিতীয় বার একেবারে একশো শতাংশ নিশ্চিত না হলে সেই বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই করা উচিত নয়। এক সিনিয়র পাইলটের কথায়, “আমি কোনও বিমানবন্দরে প্রথম বারের চেষ্টায় নামতে না পেরে আবার উড়ে গেলে তা নিয়ে আমাকে কেউ প্রশ্ন করবে না। কারণ, আমিই সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র মালিক। কিন্তু, ওই একই বিমানবন্দরে আমি যদি দ্বিতীয় বার নামতে গিয়ে আবার ব্যর্থ হয়ে উড়ে যাই, তখন প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।” প্রশ্ন উঠেছে, সেই অভিযোগ এড়াতেই কি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নেমে আসার চেষ্টা করেন পাইলট?

এই প্রশ্ন ওঠার পিছনে দু’টি প্রধান কারণ। এক, মানসিক ভাবে পাইলট স্থিতিশীল ছিলেন কি না। দুই, দু’বার মুখ ঘুরিয়ে ওড়ার ফলে সংস্থার যে অতিরিক্ত জ্বালানি পুড়ল তার দায়ভার কে নেবে। পাইলটদের একাংশের যুক্তি, দীর্ঘ উড়ানের পরে বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে পাইলটদের। একে বিমান পরিবহণের ভাষায় ‘গেট-হোম সিনড্রোম’ বলা হয়। সেই মানসিকতা থেকেও সে দিন তাড়াহুড়ো করে থাকতে পারেন পাইলট। যদিও দীপক শাঠের বাড়ি মুম্বইয়ে, কোঝিকোড় নয়।

Advertisement

সে দিন ওই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে কোঝিকোড়ে প্রথম বার নামতে না পেরে একশোর মধ্যে ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই পাইলট মুখ ঘুরিয়ে অন্য বিমানবন্দরে চলে যেতেন বলে মনে করা হচ্ছে। কোঝিকোড়ের ৮২ কিলোমিটার দূরে কান্নুর বিমানবন্দর। এ ছাড়াও কোয়ম্বত্তূর ১৩১, কোচি ১৫১ এবং তিরুচিরাপল্লি ৩২৩ কিলোমিটার দূরে ছিল। চারটিই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। চারটির রানওয়ের দৈর্ঘ কোঝিকোড়ের থেকে বেশি। কোয়ম্বত্তূরের আকাশ তখন ছিল পরিষ্কার। দৃশ্যমানতা ছিল ৬ হাজার ফুট। তা দীপক জানতেন। বিমান মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রথম বার নামতে না পারার পরে বিমানে যা জ্বালানি ছিল, তাতে বেঙ্গালুরু পর্যন্ত উড়ে যেতে পারতেন ক্যাপ্টেন দীপক।

প্রশ্ন উঠছে, কোন বাধ্যবাধকতা থেকে তিনি বিমান নিয়ে দ্বিতীয় বার নামার চেষ্টা করলেন? আর এখানে উঠে আসছে ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন (এফডিটিএল)-এর তত্ত্ব। পাইলটদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এক দিনে এক জন পাইলট সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা উড়তে পারেন। সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ ঘণ্টা এবং মাসে সর্বোচ্চ ১২৫ ঘণ্টা। বছরে ১ হাজার ঘণ্টা। মন্ত্রক সূত্রের খবর, মুম্বইয়ের বাসিন্দা ক্যাপ্টেন দীপক আগের দিন চলে গিয়েছিলেন কোঝিকোড়। শুক্রবার সেখান থেকে দুপুরে উড়ান নিয়ে পৌঁছে যান দুবাই। পাইলট যখন থেকে বিমানবন্দরে গিয়ে রিপোর্ট করেন, তখন থেকে এফডিটিএল-এর নিয়ম চালু হয়ে যায়। কোঝিকোড় থেকে দুবাই যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা লাগে। ফেরার পথে আরও তিন। যার অর্থ সে দিন সব মিলিয়ে দিনের সর্বোচ্চ ডিউটি করে প্রায় ফেলেছিলেন ক্যাপ্টেন।

ওই অবস্থায় তিনি মুখ ঘুরিয়ে যদি কান্নুরও চলে যেতেন, তা হলে সেখানে নামার পরে তিনি এফডিটিএল-এর আওতায় পড়ে যেতেন। তিনি উড়ান চালিয়ে আর ফিরতে পারতেন না কোঝিকোড়ে। তাঁকে কান্নুরেই থেকে যেতে হতো। তবে কি কোঝিকোড়ে থেকে যাওয়ার জন্যই নামার শেষ চেষ্টা করেছিলেন ক্যাপ্টেন দীপক?

কিন্তু, কেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement