শৌচাগার না থাকায় স্বামীর ঘর ছেড়েছিলেন ১৯ বছরের প্রিয়ঙ্কা ভারতী। সেই গল্প নিয়ে ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’ ছবি তৈরি হয়েছিল বলিউডে। রাতারাতি যা সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা দেশে।
তবে প্রিয়ঙ্কার মতো আরও অনেকেই শৌচাগার নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই থেকে যান লোকচক্ষুর আড়ালে।
এ বার তেমনই এক তরুণীর কাহিনি সামনে এল। শুধু নিজের বাড়ির লোকজনকেই নয়, একটা গোটা গ্রামকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে শিখিয়েছেন যিনি।
দিল্লির দক্ষিণপুরী এলাকায় বেড়ে ওঠেন কোমল হাদালা। দেশের রাজধানীতে বড় হয়েছেন, বাড়িতে শৌচাগারও ছিল, তাই গ্রামাঞ্চলের সমস্যার কথা কখনও সে ভাবে অনুভব করেননি।
২১ বছর বয়সে সাতপাকে বাঁধা পড়েন তিনি। সেই সূত্রে আস্তানাও বদলে যায় তাঁর। দিল্লি ছেড়ে চলে আসতে হয় উত্তরপ্রদেশের নিঠোরায়। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে এসে কোমল দেখেন, সেখানে শৌচাগারই নেই। ভোরের আলো ফোটার আগে দলবেঁধে মাঠে ঘাটে বেরিয়ে পড়েন বাড়ির মেয়েরা।
নতুন বিয়ে হয়েছে, তাই প্রথম প্রথম এ নিয়ে কিছু বলতে পারেননি কোমল। শৌচকর্ম সারতে বাকিদের সঙ্গে তিনিও মুখবুঁজে মাঠেঘাটেই যেতে শুরু করেন।
কিন্তু একটা সময় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে তাঁর। এ ভাবে মাঠেঘাটে যাওয়া সম্ভব নয় বলে বাড়িতে জানিয়ে দেন তিনি। নিজের সমস্যার কথা শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানান কোমল। কিন্তু বাড়ির উঠোনে শৌচাগার নির্মাণে রাজি ছিল না শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
কোমলও হাল ছাড়ার পাত্রী নন। তাই কোমর বেঁধে নেমে পড়েন। মাঠেঘাটে গেলে কত রকমের অসুখ হতে পারে, স্বামী-শাশুড়িকে বোঝাতে শুরু করেন। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তাতে সফল হন কোমল। শেষমেশ বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হয়।
তবে শুধু নিজের বাড়িতে শৌচাগার বানিয়েই থামেননি কোমল। গ্রামের লোকের মধ্যেও যাতে সচেতনতা তৈরি হয়, সেই উদ্যোগ নেন তিনি। সেই মতো গ্রামের মহিলাদের নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে হত্যে দিতে শুরু করেন। ঘরে ঘরে শৌচাগারের দাবিতে বিশেষ কমিটি গঠন করেন।
শুরুর দিকে একা লড়াই করতে হলেও, পরে আর একা লড়তে হয়নি কোমলকে। ঘরে ঘরে শৌচাগার তৈরিতে গোটা পরিবারকে পাশে পান তিনি। কাজের ফাঁকে সময় বার করে এ ব্যাপারে প্রচার শুরু করেন কোমলের স্বামী-শ্বশুররাও।
তাতেই ফল মেলে হাতে নাতে। দীর্ঘ এক বছরের চেষ্টায় নিজেদের গ্রামে আড়াইশোটি নতুন শৌচাগার গড়তে সক্ষম হন তাঁরা। ২০১৯ সালে নিঠোরা গ্রামকে ওপেন ডেফেকেশন ফ্রি ঘোষণা করে সরকার।