বর্জ্যের বিষধোঁয়ায় ঢেকেছে কোচি। ছবি: সংগৃহীত।
বিষধোঁয়ায় ভরে উঠেছে কেরলের কোচি শহরের আকাশ-বাতাস। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে শহরবাসীদের। গত কয়েক দিন ধরে বিষধোঁয়া প্রবেশ করছে তাদের শরীরে। আর কোচির এই ভয়ানক পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে ব্রহ্মপুরমকে।
শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মপুরম। ১১০ একর জমিতে এই ব্রহ্মপুরমেই আইটি পার্কের কাছে গড়ে তোলা হয়েছে বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র। কোচি পুরনিগম তো বটেই, কালামাসেরি, আলুভা, অঙ্গমালি, থ্রিক্কাকারা, ত্রিপুনিতারা পুরসভা এবং চেরানাল্লুর, ভাড়াভুকড়, পুথানকুরিশ পঞ্চায়েতের প্রতি দিনের প্লাস্টিক এবং বর্জ্য এখানে জমা করা হয়। প্রতি দিন ৩৯০ টন বর্জ্য এই কেন্দ্রে জমা করা হচ্ছে। তার মধ্যে ৬৪ শতাংশ সহজ পচনীয় জৈব বর্জ্য।
২০০৮ সালে গড়ে তোলা হয় এই বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্রটি। তার পর থেকেই প্রতি দিন ২৫০ টন করে বর্জ্য জমা হতে শুরু করে সেখানে। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই সেই জায়গাটি ভরে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও জমি অধিগ্রহণ করা হয়। গত ২ মার্চ সেই বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্রে জমে থাকা প্লাস্টিক এবং বর্জ্যে আগুন ধরে গিয়েছিল। যে আগুন নেভাতে দমকল, বায়ুসেনা এমনকি নৌসনারও সাহায্য নেওয়া হয়।
এক সপ্তাহ ধরে লাগাতার সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার লড়াই চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। আগুন তো নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু সেই বর্জ্য থেকে যে বিষাক্ত ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হয়েছে কোচি এবং তার আশপাশের এলাকা। বর্জ্য নিয়ে সমস্যা কোচিতে নতুন কোনও বিষয় নয়। এটি ক্রমে বড় আকার ধারণ করেছে। সেই সমস্যা মেটাতে ১৯৯৮ সালে ব্রহ্মপুরমে ৩৭ একর জমি কেনে কোচি পুরনিগম। অন্ধ্রপ্রদেশ টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের সঙ্গে ২০০৫ সালে একটি বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র বানানোর চুক্তি হয় কোচির পুরনিগমের। কিন্তু সেখানেও একটা সমস্যা তৈরি হয়। ওই ‘ডাম্পিং ইয়ার্ড’-এর কাছাকাছি থাকা বাসিন্দারা প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে সেখান থেকে ওই প্রকল্প সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
২০০৭ সালে ১৫ একর জলাজমি অধিগ্রহণ করে পরিশোধন কেন্দ্র বানানো হয়। ২০০৮ সালে সেটি উদ্বোধন করা হয়। ২০১২ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে দেড় টাকা কেজি দরে প্লাস্টিক বিক্রির চুক্তি হয়। যদিও সেই সংস্থা শুধু পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকই কিনেছিল। বাকি প্লাস্টিক ‘ডাম্পিং ইয়ার্ডে’ পড়েই ছিল। একটি ‘এনার্জি প্ল্যান্ট’ও গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বিনিয়োগের অভাবে সেই চুক্তি বাতিল হয়ে যায় ২০২০ সালে। জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ড বার বার সতর্ক করেছিল কোচি প্রশাসনকে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি। ফলে সেই বর্জ্যের কারণেই কোচি শহরের প্রাণ ওষ্ঠাগত।