বিয়ে করতে বউ খুঁজতে হবে জঙ্গলে! বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিয়ের ভিন্ন রীতির প্রচলন রয়েছে কিন্তু এমন কখনও শুনেছেন যে বিয়ে করতে হলে জঙ্গল ঘেঁটে বউ নিয়ে আসতে হয় হবু বরকে!
এমন রীতি এক সময় এ দেশেই ছিল। এখন জঙ্গলের অভাবে ক্রমশ হারিয়ে গিয়েছে যা। মুথুভান সম্প্রদায়ের ছেলেদের বিয়ের আগে এ ভাবেই জীবন বাজি রেখেই বউ খুঁজে আনতে হত।
কেরলের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে মুথুভান হল একটি। সম্ভবত তামিলনাড়ুর মন্দির শহর বলে পরিচিত মাদুরাই থেকে তাঁরা কেরলে এসে পৌঁছেছিলেন।
সে সময় মুথুভান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ের রীতি সারা গ্রাম উপভোগ করত এক সপ্তাহ ধরে। কারণ বিযের আগে জঙ্গলে লুকিয়ে রাখা হত হবু কনেকে।
হবু বরকে নিজের সাহসিকতার প্রমাণ দিতে হত। গভীর জঙ্গল তন্ন তন্ন করে খুঁজে বার করে আনতে হত হবু কনেকে। তারপরই তাঁদের বিয়ে হত।
হবু বর যদি কনেকে খুঁজে না বার করতে পারতেন তা হলে তাঁকে ব্যর্থ হিসাবে ধরে নিতেন গ্রামবাসী। সে ক্ষেত্রে হবু কনের জন্য আলাদা পাত্রের খোঁজ শুরু হত।
দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ের কথাবার্তা চূড়ান্ত হওয়ার পর হবু কনের বন্ধুরাই তাঁর মা-বাবার অনুমতি নিয়ে তাঁকে জঙ্গলে লুকিয়ে রাখতেন।
হবু কনে বিয়ের সাজেই বন্ধুদের সঙ্গে রওনা দিতেন। গভীর জঙ্গলে বন্ধুরা তাঁকে আগলে রাখতেন এবং তাঁর যাতে কোনও ক্ষতি না হয় তা নিশ্চিত করতেন তাঁরাই।
এ দিকে হবু বরও দলবল নিয়ে কনের খোঁজে হন্যে হয়ে জঙ্গলে খোঁজ করতে শুরু করতেন। হবু কনেকে খুঁজে পেতে অনেকেরই দিনের পর দিন জঙ্গলেই কেটে যেত।
নানা রকম বিপদের সম্মুখীনও হতে হত তাঁদের। কিন্তু ভয়ে পিছিয়ে আসতে পারতেন না। হবু কনেকে খুঁজে না পেলে গ্রামবাসীর কাছে তাঁর সম্মান চলে যেত এবং সারাজীবন অবিবাহিতই থাকতে হত।
এই ভাবে যে দিন হবু কনেকে খুঁজে পাবেন সে দিনই জঙ্গলের মধ্যে তাঁদের বিয়ে দেওয়া হত। সঙ্গে থাকা বন্ধুবান্ধবরাই বিয়ের ব্যবস্থা করতেন।
লাল চুড়ি এবং নতুন শাড়ি পরিয়ে বিয়ে সারতেন বর। তারপর সেই রাত তাঁদের একসঙ্গে ওই জঙ্গলে কাটাতে হত। গাছের উপর ঘর বেঁধে একসঙ্গে রাত কাটাতেন নবদম্পতি।
পর দিন সকালে নববধূকে নিয়ে গ্রামে ফিরতেন। আনন্দে আত্মহারা গ্রামবাসীরা উৎসবে মেতে যেতেন।
এখনও কেরলে এই আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছে। কিন্তু জঙ্গলের অভাবে বিয়ের এই আদি প্রথা প্রায় মুছে যেতে চলেছে।
বসতি স্থাপনের জন্য জঙ্গল কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গলের অভাবে এই প্রথাও দিন দিন মুছে যাচ্ছে।
সম্প্রতি কেরলে ‘মুথুভান কল্যানম’ নামে এটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ছবিটি মূলত হারিয়ে যেতে বসা এই প্রথা নিয়েই তৈরি।
তাতে এক মুথুভান সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর নাতিদের কাছে পূর্বপুরুষদের এই প্রথা গল্প বলে শোনাচ্ছেন।