আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু ও কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ। ফাইল চিত্র।
অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ের ভারতভুক্তি ও জওহরলাল নেহরুর ভূমিকা নিয়ে দু’দিন ধরে বিতর্ক চলছে বিজেপি সাংসদ তথা দেশের আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু ও কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের মধ্যে। দুই পক্ষই বিভিন্ন পুরনো নথি তুলে ধরে টুইটে লড়াই জারি রেখেছেন।
রিজিজুর দাবি, তাওয়াংকে ভারতের অধীনে আনতে আপত্তি ছিল প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর। তাওয়াংয়ে প্রথম ভারতের পতাকা ওড়ানো সেনা মেজর বব খাথিং ও তাওয়াংয়ে সেনা অভিযানের নির্দেশ দেওয়া অবিভক্ত অসমের তদানীন্তন রাজ্যপাল জয়রামদাস দৌলতরামকে তাওয়াং দখল করায় তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন নেহরু। অথচ বব তাওয়াং অভিযান চালিয়ে ১৯৫১ সালে সেখানে ভারতের পতাকা না ওড়ালে কিছু দিনের মধ্যেই চিন তাওয়াং দখল করে নিত। রিজিজু তাঁর বক্তব্যের পক্ষে বব খাথিংয়ের জীবনী, তাঁর তাওয়াং অভিযানের খতিয়ান, ফিল্ড মার্শাল স্যাম মাকেনশ-র দেওয়া সাক্ষাৎকার ও আরও অনেক তথ্য ও সংবাদ পেশ করেছেন। তাঁর দাবি, ১৯১৪ সালে হওয়া ভারত-তিব্বত সীমান্ত চুক্তির জেরে তাওয়াংয়ের প্রশাসনিক অধিকার ভারতের থাকলেও দিরাংয়ের পর থেকে তাওয়াং পর্যন্ত অংশ স্বাধীনতার পরেও লাসার অধীনে ছিল। নেহরু তাওয়াংয়ে সরাসরি ভারতীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেননি। এ দিকে অসমের রাজ্যপাল জয়রামদাস তাওয়াং দখল করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আসাম রাইফেলসের মেজর বব খাথিংকে তাওয়াং অভিযানের নির্দেশ দেন। ১৯৫১ সালের ১৭ জানুয়ারি টাংখুল নাগা বব, নেপালি ক্যাপ্টেন হেম বাহাদুর লিম্বুর সঙ্গে তাওয়াং অভিযানে রওনা হন। ৯ ফেব্রুয়ারি তাওয়াং মঠের কাছে তিব্বতি প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভারতের প্রতিনিধিদের আলোচনার দিন ধার্য হলেও তিব্বত প্রশাসন ভারতের তাওয়াং দখল মানবে না জানিয়ে বৈঠকে আসেনি। বাধ্য হয়ে বব তাওয়াংয়ের উপরে ভারতের অধিকার প্রতিষ্ঠার বার্তা দিতে জওয়ানদের রাইফেলে বেয়নেট লাগিয়ে তাওয়াং জুড়ে ফ্ল্যাগ মার্চ করার নির্দেশ দেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি তাওয়াংয়ে ভারতের পতাকা ওড়ান বব।
কিন্তু রমেশ পাল্টা টুইটে ১৯৫১ সালের ১১ ও ১৪ মার্চের দুটি টেলিগ্রাম তুলে ধরে দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রীর পদে থাকা নেহরুকে অন্ধকারে রেখে তাওয়াং অভিযান বা নেহরুর আপত্তি সত্তেও তাওয়াং দখল করার কাহিন মোটেই সত্যি নয়। কিরেন ইতিহাস বিকৃত করছেন। টেলিগ্রামের প্রথমটি মিশন লাসা-র তরফে নেহরুকে পাঠানো। যেখানে লেখা, ‘‘আমাদের তাওয়াং দখলের খবর লাসায় তিব্বত সরকারের কাছে পৌঁছেছে। তারা এ নিয়ে সন্দিহান ও ইয়ংতুংকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমাদের তরফে দ্রুত এ বিষয়ে বক্তব্য তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা করতে হবে।’’ পরেরটি নেহরুর তরফে জবাব যেখানে বলা হয়েছে, ‘‘১৯১৪ সালের সীমান্ত চুক্তির ভিত্তিতেই তাওয়াং ভারতের অংশ। দুই সরকারের বিশেষ সম্পর্কে জোর দিয়ে বিষয়টি তিব্বত সরকারকে বোঝাতে হবে।’’