হামলার পর। মণিপুরের চাণ্ডেলে এএফপি-র তোলা ছবি। (ইনসেটে) সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ।
বৃহস্পতিবার মণিপুরে সেনা কনভয়ের উপর হামলার দায় স্বীকার করল এনএসসিএন খাপলাং জঙ্গি গোষ্ঠী। হামলার পর শুক্রবার মণিপুরে যান সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ। সেনা এবং পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেনারেল সুহাগ। সেই বৈঠকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ও আসাম রাইফেল্সকে সর্বাত্মক অভিযান চালানোর ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। মায়ানমার সীমান্তও সিল করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। এই হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া জঙ্গিদের যৌথবাহিনীর প্রধান মেজর রাজনগ্লুঙের দেহ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। তাঁকে শহিদ আখ্যা দিয়ে তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন খাপলাং গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এস এস খাপলাং। চিনের মদতে এনএসসিএন খাপলাং জঙ্গিদের যৌথ মঞ্চ এই হামলা চালিয়েছে বলে সন্দেহ সেনার।
এ দিকে, এমন নৃশংস জঙ্গি হামলার পর আফসা আইন প্রত্যাহার করা সম্ভব নয় বলে বলে জানিয়েছেন মণিপুরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গাইখাংগাম। যদিও আফসা আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরম শর্মিলা চানু।
নিহত জওয়ানেরা অধিকাংশই হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। জওয়ানদের দেহ ফিরিয়ে আনতে বিশেষ বিমান পাঠাতে বিমান বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে মণিপুরের চান্ডেল জেলায় সেনাবাহিনীর কনভয়ের উপরে হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলায় নিহত হন ১৮ জন সেনা জওয়ান। আহত হন ১২ জন। সেনা সূত্রে খবর, ওই দিন ভোরে যখন ৬ নম্বর ডোগরা রেজিমেন্টের কয়েক জন জওয়ান ৫টি গাড়িতে করে ইম্ফল থেকে মোটুল যাচ্ছিলেন। সেই সময় তেংনাউপল-নিউ সোমতালের রোডে পারালং ও চারং গ্রামের মধ্যবর্তী মোলটুক গ্রামের কাছে কনভয়ের একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। বিস্ফোরণের জেরে গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়। শুরু হয় চারদিক থেকে ঘিরে ধরে জওয়ানদের লক্ষ্য করে লাগাতার গুলিবর্ষণ। অতর্কিতে এই হামলার জেরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১১ জওয়ানের। জওয়ানরা পাল্টা গুলি চালালেও জঙ্গিদের কেউ হতাহত হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে জঙ্গিরা একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রও লুঠ করে। জখম জওয়ানদের পরে চপারে লেইমাখং সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃত্যু হয় আরও ৯ জনের।
গত প্রায় তিন দশকের মধ্যে সেনাবাহিনীর উপরে এত বড় হামলা উত্তর-পূর্বে হয়নি। জঙ্গিরা রকেট চালিত গ্রেনেড (আরপিজি) হাতে ছবি প্রকাশ করলেও, কখনও হামলায় তা ব্যবহার করেনি। আহতেরা জানিয়েছেন, কনভয়ের প্রথম গাড়ি লক্ষ্য করে প্রথমে ক্রুড মাইন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তাতে রাস্তা থেকে ছিটকে যায় গাড়িটি। পরে পিছনের গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় রকেট চালিত গ্রেনেড। তাতে ওই ট্রাকের জ্বালানিতে আগুন ধরে যায়। উদ্ধার হওয়া দেহগুলির মধ্যে ১০টি দেহ পুরোপুরি দগ্ধ অবস্থায় মিলেছে।
প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ, আনুমানিক ৫০ জন জঙ্গির একটি দল এই হামলা চালিয়েছে। সুপরিকল্পিত ভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে সেনা সূত্রে খবর। আমেরিকায় তৈরি অত্যাধুনিক রকেট লঞ্চারের সাহায্যে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে সন্দেহ সেনার। মণিপুরে হামলার ঘটনাকে সার্বিকভাবে গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা বলেই মনে করছে সেনাবাহিনী। সেনাসূত্রে খবর, সশস্ত্র জঙ্গিদের আনাগোনার খবর গ্রামবাসীরা জানতে পারলেও গোয়েন্দারা তার আভাস পাননি, বা পেলেও গুরুত্ব দেননি। সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গ করার পর থেকে অরুণাচল ও মণিপুরের পার্বত্য জেলাগুলিতে খাপলাং বাহিনীর প্রভাব বাড়ছিল। গত মাসেও মণিপুরের তামেংলং জেলায় সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষে মৃত্যু হয় চার খাপলাং জঙ্গির। সম্প্রতি জঙ্গি সংগঠনগুলি মিলিত বিবৃতি দিয়ে জানায়, সংঘর্ষবিরতিতে না থাকা মেইতেই, নাগা, অসমিয়া ও বড়ো জঙ্গি সংগঠনগুলি এ বার থেকে এক ছাতার তলায় যুদ্ধ চালাবে। কিন্তু, তার পরেও কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারগুলি সেই ঘোষণাকে যে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেয়নি তা হামলার ঘটনাতেই পরিষ্কার।