Crime

চোদ্দ বছরে গৃহবধূর হাতে খুন স্বামী-সহ ৬, কবর খুঁড়ে রহস্য ভেদ করল পুলিশ

কেরলের কোঝিকোড়ের এই ভয়ঙ্কর অপরাধ সম্প্রতি সামনে এসেছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:১৬
Share:

অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।

রীতিমতো আটঘাট বেঁধেই এগিয়েছিলেন। সন্দেহের কোনও জায়গাই ছিল না। কিন্তু শেষরক্ষা হল না তাতেও। স্বামী-সহ ছ’জনকে খুনের ঘটনায় এক গৃহবধূকে গ্রেফতার করল কেরল পুলিশের অপরাধ দমন শাখা। দীর্ঘ চোদ্দ বছর ধরে পরিকল্পনা করে ওই মহিলা একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

কেরলের কোঝিকোড়ের এই ভয়ঙ্কর অপরাধ সম্প্রতি সামনে এসেছে। স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই মহিলার নাম জলি পোন্নামাট্টম। সম্ভ্রান্ত ক্যাথলিক পরিবারের সদস্য তিনি। প্রথম খুনের পর ১৭ বছর কেটে গেলেও, এত দিন গোটা বিষয়টি চেপে রেখেছিলেন তিনি। সম্প্রতি পরিবারের এক সদস্যের অভিযোগ পেয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হলে বিষয়টি সামনে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০০২ সালে, ৫৭ বছর বয়সে আচমকাই মারা যান জলির শাশুড়ি আন্নাম্মা টমাস। সেইসময় স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। তার ঠিক ছ’বছর পর আন্নাম্মার স্বামী টম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

Advertisement

আরও পড়ুন: চাকরি, দ্রব্যমূল্য নিয়ে মোদী সরকারের উপর আস্থা কমেছে মানুষের, জানাল আরবিআই​

২০১১ সালে, ৪০ বছর বয়সে একই ভাবে মৃত্যু হয় তাঁদের ছেলে তথা অভিযুক্ত জলির স্বামী রয় টমাসের। সেইসময় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বিষক্রিয়ার বিষয়টি উঠে আসে। ওই পর্যন্তই। তার পর আর তদন্ত সে ভাবে এগোয়নি। এর পর ২০১৪ সালে আন্নাম্মার ভাই ম্যাথুও একই ভাবে মারা যান। সাইরো-মালাবার গির্জার অধীনস্থ সমাধিক্ষেত্রে তাঁদের চার জনকেই সমাধিস্থ করা হয়।

এর ঠিক দু’বছর পর, ২০১৬-য় রয় টমাসের খুড়তুতো ভাই শাজু-র স্ত্রী এবং দু’বছরের মেয়ে অ্যালফনসার মৃত্যু হয়। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে পর পর মৃত্যুর ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে গোটা পরিবার। সেই সুযোগেই শাজুর সঙ্গে দ্বিতীয় বার বিয়ে হয় জলির। শ্বশুরমশাইয়ের শেষ উইল অনুযায়ী সমস্ত সম্পত্তির উপর নিজের মালিকানা দাবি করেন জলি। কিন্তু এই নিয়ে প্রবাসে বসবাসকারী দেওর মোজোর সঙ্গে ঝামেলা চরমে পৌঁছয়।

এমন পরিস্থিতিতে মোজো-ই পরিবারের ঘটে যাওয়া পর পর রহস্যমৃত্যুর তদন্ত নতুন করে শুরু করার আর্জি নিয়ে অপরাধ দমন শাখার দ্বারস্থ হয়। তাতেই গোটা ঘটনা সামনে আসে। রহস্যমৃত্যুর জট খুলতে গিয়ে কবর খুঁড়ে নিহতদের মৃতদেহের ফরেন্সিক পরীক্ষা হয়। তাতে দেখা যায়, মৃত্যুর আগে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু খেয়েছিলেন। প্রত্যেকের শরীরে সায়ানাইডের অস্তিত্বও মেলে। তাতে সায়ানাইড খেয়ে স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে তাঁদের খুন করা হয় বলে সন্দেহ জাগে গোয়েন্দাদের।

আরও পড়ুন: অমিত শাহের বিমান চালানোর জন্য ভুয়ো তথ্য দিয়ে ইমেল, ইস্তফা উইং কমান্ডারের​

প্রতিটি খুনের সময় জলি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং ছ’টি খুনের ঘটনার সময়, প্রত্যেকবারই ঘটনাস্থলে এর পরেই দফায় দফায় জলি ও শাজুকে জেরা করা হয়। তাঁদের বয়ানে বিস্তর অসঙ্গতি ধরা পড়ে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এমনকি ঘটনার সময় জলি ও শাজু ফোনে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন বলেও উঠে আসে তদন্তে। এর পরই জলিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আটক করা হয় শাজুকেও। দফায় দফায় তাঁদের জেরা করা হয়েছে। দু’জনের বয়ানে বিস্তর অসঙ্গতি ধরা পড়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

জলিকে সায়ানাইড পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে এমএস ম্যাথু এবং প্রাজিকুমার নামে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ম্যাথু একটি গয়নার দোকানের কর্মী এবং প্রাজিকুমার ওই দোকানের জন্য গয়না তৈরি করেন। দীর্ঘ দিন ধরে জলিকে চেনেন তাঁরা। তবে সম্পত্তির লোভেই জলি সকলকে খুন করেছে কি না, সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত নয় পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement