সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মহিলাদের মৃত্যুর হারের মতো বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নীতি আয়োগের রিপোর্টে।— প্রতীকী ছবি।
স্বাস্থ্য পরিষেবার নিরিখে দেশের মধ্যে এক নম্বরে কেরল। আর একুশটি বড় রাজ্যের মধ্যে সব চেয়ে নীচে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। নীতি আয়োগের সদ্য প্রকাশিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এক রিপোর্টে পেশ করা হয়েছে এমনই তথ্য।
বিশ্বব্যাঙ্কের সহযোগিতায় তৈরি ওই রিপোর্টে কেরলের পরেই রয়েছে পঞ্জাব এবং তামিলনাড়ু। দশম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। একেবারে নীচের দিকে রয়েছে বিহার, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য। গত এক বছরে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিতে সবচেয়ে ভাল ফল করেছে ঝাড়খণ্ড।
স্বাস্থ্য পরিষেবায় দেশের মধ্যে কোন রাজ্য কোথায় দাঁড়িয়ে তা নিয়ে শুক্রবার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নীতি আয়োগ। সদ্যোজাতের মৃত্যু হার (২৯ দিনের মধ্যে), জন্মের পাঁচ বছরের মধ্যে মৃত্যুর পরিসংখ্যান, নবজাতকের জন্মকালীন ওজনের অনুপাত, টীকাদান কর্মসূচি, টিবি-এইচআইভি’র মতো রোগ প্রতিরোধে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকাকে মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি, সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মহিলাদের মৃত্যুর হার, শহর-জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতির মতো বিষয়গুলির উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দশ নম্বরে থাকা বাংলার সূচক আগের বছরের তুলনায় ০.৩৮ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এটুকু বৃদ্ধিকে আদৌও সন্তোষজনক মনে করছে না আয়োগ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সদ্যোজাতদের মৃত্যুর প্রশ্নে গোটা দেশে চতুর্থ স্থানে পশ্চিমবঙ্গ। কেরলে প্রতি প্রতি হাজার জনে যেখানে ৬ জন শিশু মারা যায়। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাটা ১৮। তবে পাঁচ বছরের নীচের শিশুমৃত্যুর প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ষষ্ঠ। এক নম্বরে থাকা কেরলে ১৩ জনের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যা হল ৩০। জন্মের সময়ে কম ওজন থাকার প্রশ্নে এক নম্বরে রয়েছে তেলঙ্গানা, সেখানে যখন মাত্র ৬% শিশু ওই সমস্যায় ভোগে। পশ্চিমবঙ্গে এর শিকার হল ১৬.৫% সদ্যোজাত। শিশু-টিকাকরণে পশ্চিমবঙ্গ দেশের বড় রাজ্যগুলির মধ্যে পঞ্চম হলেও, হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রসবের ক্ষেত্রে রাজ্য আট নম্বরে। এক নম্বরে গুজরাত। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা জেলা হাসপাতালগুলিতে নার্স নিয়োগের প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ চতুর্থ স্থানে থাকলেও, গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসক নিয়োগের ব্যাপারে একেবারে শেষের দিকে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে শীর্ষ পদে দীর্ঘ সময় ধরে একই আমলাকে রাখার প্রশ্নে সব থেকে উপরে বাংলা। নীতি আয়োগও মনে করছে, সুচারু ভাবে কোনও প্রকল্পের রূপায়ণের জন্য আমলাদের একই পদে দীর্ঘ দিন ধরে রাখা উচিত।
রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই উল্লসিত কেরলের বাম সরকার। কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজার দাবি, বামেরা সরকারে আসার পর থেকে যে সব পদক্ষেপ করেছে, তার জন্যই কেরল শীর্ষে জায়গা পেল। তাঁর দাবি, ‘‘স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপের স্বীকৃতি এটা।’’
আর অন্য দিকে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে রাজ্যের ব্যর্থতার কথা উড়িয়ে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার। রাজ্যের এক বিজেপি নেতার দাবি, ‘‘যে সময়ের ভিত্তিতে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সে সময় বিজেপি নয়, ক্ষমতায় ছিল সমাজবাদী পার্টি। ফলে এর দায় কোনও ভাবেই বিজেপির উপর চাপানো যায় না।’’
আরও পড়ুন: জম্মুতে সেনা ক্যাম্পে জঙ্গি হানা, নিহত ১ অফিসার, আহত ৬
রিপোর্ট প্রকাশের পর নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত বলেন, ‘‘এই থিঙ্কট্যাঙ্কের বিশ্বাস, স্বাস্থ্য সূচক প্রতিযোগিতামূলক ও সহযোগিতামূলক সাংবিধানিক কাঠামো জোরদার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণে গতি বাড়বে এতে।’’ তিনি আরও জানান, দেশের ৭৬০টি জেলা হাসপাতালের তালিকা তৈরি হচ্ছে। যাদের কাজ খারাপ, তাদের নাম প্রকাশ করে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করে লজ্জাজনক পরিস্থিতির মুখে ফেলা হবে বলে জানিয়েছে নীতি আয়োগ। ‘নেমিং ও শেমিং’ নীতি মেনে আর্থিক সাহায্যও কমানো হবে সে সব হাসপাতালের।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে শুনানিরও এ বার লাইভ সম্প্রচার?
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সচিব প্রীতি সুদন বলেন, ‘‘যে রাজ্যগুলি স্বাস্থ্য সূচকে ভাল ফল দেখাবে, তারা ইনসেনটিভ পাবে।’’ পাশাপাশি, বিশ্বব্যাঙ্কের অধিকর্তা জুনেদ আইমাদের কথায়, ‘‘ভাল স্থান পাওয়ার অর্থ হল রাজ্য ও হাসপাতালগুলির জন্য বেশি আর্থিক সহায়তা।’’ নীতি আয়োগের সদস্য বিনোদ পলের মতে, ‘‘এটি একটি পরীক্ষার মতো। হাসপাতালের দুর্বলতাগুলিকে খুঁজে পেলে আগামী দিনে সঠিক রাস্তায় হাঁটা সম্ভব হবে।’’
গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।