ছবি: সংগৃহীত।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে নজির গড়েছে কেরল। সেই আইনের জেরেই এ বার সেখানে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত গিয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন মোড়ে। বিধানসভায় রাজ্য সরকারের দেওয়া ভাষণ হুবহু পাঠ না করে নিজের কথা বলার চেষ্টা করলে রাজ্যপালকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে প্রস্তাব আনার তোড়জোড় চলছে। বাস্তবে তেমনই ঘটলে রাজ্যপালকে ইমপিচমেন্টের প্রথম নজির হবে কেরলেই।
কেরলে বাম মন্ত্রিসভা রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের কাছে তাঁর ভাষণের যে বয়ান পাঠিয়েছে, তাতে আপত্তি তুলে ফেরত পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। শেষ পর্যন্ত রাজ্যপাল যদি রাজ্যের মত নস্যাৎ করে নিজের বক্তব্য তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন, তখনই তাঁকে ফেরত নেওয়ার দাবিতে প্রস্তাব আনার ভাবনাচিন্তা চলছে। এই বিষয়ে শাসক বাম ও বিরোধী কংগ্রেসের অবস্থান একই মেরুতে। এই প্রেক্ষিতেই বাংলার দিকে কৌতূহলী নজর রাখছেন রাজনৈতিক শিবিরের অনেকে। বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করে চলেছেন। বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপাল ধনখড়ও যদি রাজ্য সরকারের তৈরি করে দেওয়া বক্তৃতায় আইনশৃঙ্খলা-সহ কোনও বিষয়ে আপত্তি তোলেন, তখন পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে— কৌতূহল সেই প্রশ্নেই!
বাংলায় ধনখড়ের মতোই দক্ষিণী রাজ্যে বাম সরকারের সঙ্গে টানা সংঘাত চলছে রাজ্যপাল আরিফের। সিএএ-বিরোধিতায় রাজ্য বিধানসভায় যে প্রস্তাব পাশ হয়েছিল, তা ‘অসাংবিধানিক’ বলে মত দিয়েছিলেন রাজ্যপাল আরিফ। রাজ্য সরকারের মামলা করার সিদ্ধান্ত কেন তাঁকে আগাম জানানো হয়নি, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন। এর পরে বাজেট অধিবেশনে পড়ার জন্য রাজ্যপালের ভাষণের বয়ানে বাম মন্ত্রিসভা সিএএ-র মতো ‘অসাংবিধানিক’ আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাবের প্রসঙ্গ রেখেছে। রাজ্যপালের আপত্তি সেখানেই। আবার রাজ্য সরকারও তাদের অবস্থানে অনড়। দু’বছর আগে কেরলের রাজ্যপাল পি সদাশিবম কিছু অংশ বাদ দিয়ে তাঁর ভাষণ পাঠ করেছিলেন। রাজ্যপাল আরিফ আজ, বুধবার সেই পথে হাঁটলে সমস্যার কিছু নেই। কিন্তু নিজের বক্তব্য উল্লেখ করলে সমস্যা দেখা দেবে তখনই। প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল তাঁর ভাষণের সামান্য অংশ পাঠ করলেও নিয়মমাফিক সেই বক্তৃতা বিধানসভায় পেশ হয়েছে বলে নথিভুক্ত হয়।
আরও পড়ুন: শাহিন বাগ ছাড়া কথা নেই বিজেপির মুখে
রাজ্যপালকে ফেরত নেওয়ার দাবিতে তাঁরা প্রস্তাব আনতে চান বলে বিধানসভায় নোটিস দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের রমেশ চেন্নিথালা। স্পিকার শ্রীরামকৃষ্ণন জানিয়ে রেখেছেন, সেই নোটিস গ্রহণযোগ্য। পরিস্থিতির বিচারে প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত আনতে হলে বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা (বিএ) কমিটিতে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত হবে। সিপিএম সূত্রের খবর, বিরোধী ফ্রন্ট ইউডিএফের এই প্রস্তাবকে হাতিয়ার করে রাজ্যপালকে বিঁধতে আপত্তি নেই মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের।
চেন্নিথালার বক্তব্য, ‘‘এই রাজ্যপাল ক্রমশ বিজেপির মেগাফোন হয়ে উঠেছেন! তাঁকে ফেরত নেওয়ার দাবি আমরা তুলব।’’ বিজেপি-বিরোধিতায় তাঁরা বামেদের চেয়ে এগিয়ে, এই বার্তা দিতে চান চেন্নিথালারা। এবং তাতে মূল লক্ষ্যপূরণে কোনও অসুবিধা নেই বাম শিবিরের। রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী এ কে বালনের কথায়, ‘‘রাজ্যপাল বিধানসভার অমর্যাদা ঘটালে তার পরবর্তী পদক্ষেপ তো ঘটবেই। সবটাই ঠিক হবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে।’’