বেনজির সঙ্কট সিপিএমে!
একের পর এক প্রতিনিধি পোডিয়ামে এসে দাঁড়াচ্ছেন। আর তেড়ে আক্রমণ করছেন সীতারাম ইয়েচুরিকে। বলছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করার পরিকল্পনায় সাধারণ সম্পাদকের নিজস্ব স্বার্থ আছে! গত কয়েক বছরে সংসদের ভিতরে-বাইরে কংগ্রেস-সহ নানা দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে সাধারণ সম্পাদকই বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসের লাইন ভেঙেছেন! এখন রাজ্যসভায় যেতে না পেরে তিনি অবসাদগ্রস্ত!
তিরুঅনন্তপুরমের এ কে জি হলে খোদ সাধারণ সম্পাদককে যখন যেমন খুশি তুলোধোনা করছেন সিপিএম জেলা সম্মেলনের প্রতিনিধিরা, মঞ্চে বসে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন। আর অন্য প্রান্তে অসহায় ভঙ্গিতে বসে ভি এস অচ্যুতানন্দন। দলের অন্দরে প্রকাশ কারাট বনাম ইয়েচুরি শিবিরের যে বিভাজন কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভোটে প্রকট হয়েছিল, তাকেই এ ভাবে আরও বেআব্রু করে দিল তিরুঅনন্তপুরম জেলা সম্মেলন।
ইয়েচুরির ‘অপরাধ’, ছেলের কেলেঙ্কারির খবর পেয়ে কেরলের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারিকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। সম্মেলনে ‘ব্যস্ততা’র কারণ দেখিয়ে কো়ডিয়ারি দিল্লিমুখো হননি। আর ইয়েচুরি কয়েক দিন আগে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বলে দিয়েছেন, বিনয় বিনোদিনী বালকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে অভিযোগের চিঠি দলের কাছে এসেছিল! এতেই আদা জল খেয়ে পর দিন থেকে তিরুঅনন্তপুরম জেলা সম্মেলনে ইয়েচুরির নামে শাপ-শাপান্ত করিয়েছেন বিজয়ন-কোডিয়ারিরা।
কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নে কেরল সিপিএমের আপত্তি ছিলই। তাতে আরও তিক্ততার মাত্রা জুড়েছে কোডিয়ারি-পুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ। আর্থিক প্রতারণার মামলা দায়ের হওয়ায় কোডিয়ারির বড় ছেলে বিনয়কে দুবাই ছাড়তে নিষেধ করেছে আমিরশাহির পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে তাঁরা ইমপিচ করতে চান বলে জানিয়েছিলেন ইয়েচুরি। কয়েক জন প্রতিনিধি কটাক্ষ করেছেন, ইয়েচুরি লোক হাসিয়েছেন! নিজে বক্তৃতা করে কোডিয়ারি সংযোজন করেছেন, ইমপিচমেন্টের ভাবনায় অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না কিন্তু এটা দলে আলোচনা করে নেওয়া কোনও সিদ্ধান্ত নয়!
সিপিএম সূত্রের খবর, যে সংস্থার কাছ থেকে মহার্ঘ গাড়ি কেনার খরচ-সহ ১৩ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ বিনয়ের বিরুদ্ধে, দুবাইয়ের এক জনের সঙ্গে যৌথ ভাবে তা চালান এক মালয়ালি ব্যবসায়ী। যাঁর বাবা ছিলেন সিপিএমের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক ইএমএস নাম্বুদিরিপাদের অফিসের কর্মী। ওই ব্যবসায়ীই প্রথমে কেরলে এসে কোডিয়ারির সঙ্গে দেখা করেন। পরে তিনি দিল্লিতে যান ইয়েচুরির কাছে। সেই খবর কেরলে পৌঁছতেই নয়া গোলমালের সূত্রপাত। দলেরই একটি সূত্রের আরও দাবি, দুবাইয়ে বিনয়ের ব্যবসা আসলে ড্যান্স বারের। যা কখনওই কেরল সিপিএম প্রকাশ্যে আনতে নারাজ।
ইয়েচুরির অবস্থান হল, কোনও নেতার পরিজন কেলেঙ্কারিতে জড়ালে দলকে ব্যবহার করে তাঁকে আড়াল করা যাবে না। এমনকী, পলিটব্যুরোর সদস্য এস আর পিল্লাইও বলে দিয়েছেন, ‘‘ছেলে, মেয়ে, নাতি বা বন্ধুদের কেউ নেতা-নেত্রীদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। সকলকে সতর্ক থাকতে হবে!’’
সতর্ক হওয়ার আগে পাল্টা আক্রমণে চলে গিয়ে দলে তোলপাড় ফেলেছেন কোডিয়ারিরা!