জুড়ল সেতু, ৭২ বছর পরে ‘হঠাৎ দেখা’ দম্পতির

দু’জনেই বদলে গিয়েছেন অনেক। চোখের দৃষ্টি কমেছে। জীবনের বাঁকে হাত ধরেছে অন্য সম্পর্ক। অনেক ক্ষোভ, অনেক অভিযোগ ছিল। তবু দেখা হওয়ার মুহূর্তে ঘিরে ধরল শুধুই একরাশ স্তব্ধতা। বহু চেষ্টাতেও বাধ মানল না চোখের জল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কান্নুর শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৫
Share:

মুহূর্ত: নারায়ণনকে পাশে পেয়ে অভিমানী সারদা।

মাঝখানে বাহাত্তরটা বছর কেটে গিয়েছে।

Advertisement

দু’জনেই বদলে গিয়েছেন অনেক। চোখের দৃষ্টি কমেছে। জীবনের বাঁকে হাত ধরেছে অন্য সম্পর্ক। অনেক ক্ষোভ, অনেক অভিযোগ ছিল। তবু দেখা হওয়ার মুহূর্তে ঘিরে ধরল শুধুই একরাশ স্তব্ধতা। বহু চেষ্টাতেও বাধ মানল না চোখের জল।

সেই কবে বিয়ে হয়েছিল, আজ তা ভাল মনেও করতে পারেন না কেরলের বাসিন্দা ৯৩ বছরের ই কে নারায়ণন। তখন তিনি ১৭। বিয়ে হয়েছিল বছর তেরোর সারদার সঙ্গে। আজ এত বছর পরে ৮৯ বছরের সারদাকে দেখে কথা খুঁজে পেলেন না নারায়ণনও।

Advertisement

সেটা ১৯৪৬ সাল। কেরলের কাভুম্বায়ি গ্রামে কৃষক আন্দোলন তখন তুঙ্গে। লাগাতার পুলিশি অভিযানের দাপটে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল নারায়ণন ও সারদার দশ মাসের দাম্পত্য।

পুলিশের ভয়ে গা ঢাকা দিতে হয়েছিল নারায়ণন ও তাঁর বাবা কৃষক-নেতা রমন নাম্বিয়ারকে। মাঝরাতে নারায়ণনের বাড়িতে তল্লাশিতে এসে ছোট্ট সারদাকে একা দেখে তাঁকে বাবার কাছে রেখে আসে মালাবার পুলিশের বিশেষ বাহিনী।

আরও পড়ুন: পাম্পের অপেক্ষায় থমকে উদ্ধার

তবে এত কিছুর পরেও শেষ রক্ষা হল না। জ্বালিয়ে দেওয়া হল বাড়ি। পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন নারায়ণনরা। আট বছরের জেল হল তাঁর। কান্নুরের তিনটি জেলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাখা হল নারায়ণনকে। ১৯৫০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সালেম জেলের মধ্যেই পুলিশের গুলিতে মারা গেলেন বাবা রমন। মোট ২২টি গুলি ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল তাঁর শরীর।

এ দিকে তত দিনে নারায়ণনের জন্য অপেক্ষায় ক্ষান্ত দিয়েছে সারদার পরিবার। ফের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেল সারদার। ১৯৫৭-য় জেল থেকে বেরিয়ে ফের বিয়ে করলেন নারায়ণনও।

এর পরে কেটে গিয়েছে অনেকগুলি দশক। মারা গিয়েছেন সারদার স্বামী। স্ত্রী-বিয়োগ হয়েছে নারায়ণনেরও।

সারদার ছেলে ভার্গবন বর্তমানে জৈব চাষ করেন। নানা সূত্রে সম্প্রতি নারায়ণনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। জানতে পারেন পুরনো সমস্ত কথা। তার পরেই সিদ্ধান্ত নেন, দেখা করিয়ে দিতেই হবে দূরে চলে যাওয়া দু’টো মানুষকে।

সেই মতোই সারদার বাড়িতে এলেন নারায়ণন। ভার্গবনই সমস্ত ব্যবস্থা করেছিলেন। ছিল মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনও।

তবে শুরুতেই বেঁকে বসলেন সারদা। জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে ফেলে আসা অতীতের সঙ্গে আর দেখা করতে চাননা তিনি। পরিবারের অনেক সাধ্যসাধনার পরে দেখা তো করলেন। কিন্তু মুখে কথা সরল না। মাটির দিকে চোখ রেখে শুধু বললেন, ‘‘আমার কারওর উপরে রাগ নেই।’’ তবু প্রাক্তন স্ত্রীর মাথায় হাত দিয়ে নারায়ণন জিজ্ঞেস করে গেলেন, ‘‘তবে চুপ করে আছ যে?’’

উত্তর এল না। শুধু বৃদ্ধার গাল বেয়ে ঝরতে লাগল ৭২ বছরের জমে থাকা অভিমান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement