খুশি: সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত দীপিকা সিংহ রাজওয়াতের। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: রয়টার্স।
কাঠুয়া কিংবা জম্মুতে শুনানি হলে কখনওই নিরপেক্ষ বিচার হবে না, এই আশঙ্কায় ভিন্ রাজ্যে মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন কাঠুয়ায় নির্যাতিত শিশুটির বাবা। আজ সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি জম্মু-কাশ্মীর থেকে পঞ্জাবের পঠানকোটে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আজ জানায়, মামলার রুদ্ধদ্বার শুনানি হবে। শুনানি চলবে প্রতিদিন। অযথা সময় নষ্ট না করে মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। মামলা পঞ্জাবে সরিয়ে দেওয়া হলেও জম্মু-কাশ্মীরের রণবীর দণ্ডবিধি (জম্মু-কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের আওতায় ভারতীয় দণ্ডবিধি কার্যকর হয় না। এখানে রণবীর দণ্ডবিধি প্রযোজ্য) অনুযায়ী শুনানি হবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
শিশুটির পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও আইনজীবীকে যথেষ্ট নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে কোর্ট। কাঠুয়া-কাণ্ডের নাবালক অভিযুক্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল রাখার কথাও জানিয়েছে বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের মতে, ‘সুবিচার’ এবং ‘ভয়’ শব্দ দু’টি একে অপরের পরিপন্থী। যেখানে অভিযোগকারী, অভিযুক্ত ও সাক্ষীরা নিরাপদে থাকতে পারেন এবং নির্ভয়ে আদালতে আসতে পারেন সেখানেই সুবিচার পাওয়া যাবে।
পঠানকোট জেলা বিচারককে শুনানি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। অন্য কোনও কোর্টে মামলা স্থানান্তরিত করতে পারবেন না তিনি। মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উর্দু থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে হবে। জম্মু-কাশ্মীর সরকারকে এই মামলায় এক জন বিশেষ সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করার অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
কাঠুয়ার শিশুটির বাবার এই আবেদনের পাশাপাশি দুই অভিযুক্ত সিবিআই তদন্তের আর্জিও জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু সেই আর্জি খতিয়ে দেখতেই অস্বীকার করেছে কোর্ট। বেঞ্চ জানায়, তদন্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের অপরাধ দমন শাখা চার্জশিট পেশ করেছে। অতিরিক্ত তদন্তের প্রয়োজন হলে পরে ভেবে দেখা যাবে। ‘‘চার্জশিটই যখন দাখিল হয়ে গিয়েছে, অন্য কোনও সংস্থার কী প্রয়োজন,’’ বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন নির্যাতিতা শিশুটির পরিবারের আইনজীবী দীপিকা সিংহ রাজওয়াত। তিনি বলেন, ‘‘এই রায়ে আমি খুশি। আমরা চেয়েছিলাম শুধু কাঠুয়া নয়, জম্মু-কাশ্মীরের বাইরের কোনও আদালতে মামলার শুনানি হোক। আমি এ বার অন্তত এটুকু নিশ্চিত, শুনানি ঠিক ভাবে হবে। ওই শিশুর পরিবারও নিরাপদে সাক্ষ্য দিতে পারবে।’’ খুশি কাঠুয়ার শিশুটির মা-বাবাও। শিশুটির মা আজ বলেন, ‘‘কাঠুয়ায় শুনানি চললে, কিছুতেই সুবিচার হত না। দোষীরা ছাড়া পেয়ে যেত। তার পরে আমাদের খুন করত। যে দিন ওদের ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হবে, সব চেয়ে বেশি খুশি হব।’’