গুলাম মালিকের এখনও মনে রয়েছে মন্ত্র।
নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্য এবং তৎপরবর্তী সময়ে দেশের একাধিক স্থানে হিংসার মধ্যে এ এক বিরল ছবি। গল্পের শুরু বহু বছর আগে। তবে গল্পটি এখনও প্রাসঙ্গিক। এক মুসলিম পশুপালক হঠাৎ এক দিন পাহাড়ের গুহায় তুষারের শিবলিঙ্গ আবিষ্কার করে ফেললেন। তার পর দেড়শো বছরেরও বেশি সময় ধরে সেই সংখ্যালঘু পরিবারই পুণ্যার্থীদের দর্শন করাতে নিয়ে যায়। সেখানে মন্ত্র পড়িয়ে পুজো করায়। এখনও সেই মন্ত্র স্পষ্ট মনে রয়েছে গুলাম নবি মালিকের। পহেলগাঁও-এর বাটাকোট গ্রামের বাসিন্দা। বয়স ৯৫ বছর। বয়সের কারণে বহু বছর যেতে পারেননি অমরনাথ যাত্রায়। কিন্তু টানা ৬০ বছর ভক্তদের অমরনাথ গুহায় নিয়ে গিয়েছেন। পৌরোহিত্য করেছেন। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে মালিক বলেন, অমরনাথ যাত্রীরা বরাবর তাঁদের পরিবারকে পুরোহিতের মর্যাদা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ ভাবেননি আমরা মুসলিম না হিন্দু।’’
সালটা ১৮৫০। গুলামের প্রপিতামহ বোটা মালিক অমরনাথের গুহা আবিষ্কার করেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত এই মালিক পরিবারই তীর্থযাত্রীদের দর্শনে নিয়ে যেত। তার পর অমরনাথ মন্দির বোর্ড দেড়শো বছরের প্রথায় ইতি টানে।
গুলামের অভিযোগ, ‘‘এর নেপথ্যে রয়েছে রাজনীতি।’’ তবে এখনও অনেক যাত্রী মনে করেন, মালিক পরিবারের সঙ্গে দেখা না করে গেলে অমরনাথ তীর্থযাত্রা অসম্পূর্ণ থাকবে। তাঁদের কাছে এসে শুনে যান শিবলিঙ্গ আবিষ্কারের গল্প। এক বার তীর্থযাত্রীদের একটি দল মালিক পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য শেষনাগ থেকে ফিরে এসেছিলেন।
৭০ বছর আগে প্রথম অমরনাথ যাত্রা করিয়েছিলেন গুলাম। নিজের সবথেকে ভাল স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে জানান, ‘‘মহারাজা হরি সিংহের স্ত্রী রানি তারা দেবীকে নিয়ে গেছিলাম। ওঁকে দিয়েও পুজো করিয়েছিলাম। রানি খুশি হয়ে স্মারক হিসেবে তামার ট্রে দিয়েছিলেন। তাতে সাল, তারিখ লেখা।’’
নিরাপত্তার কারণে এখন চাইলেও তীর্থযাত্রীরা আর পহেলগাঁও এসে মালিক পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। সেই নিয়ে আক্ষেপ করলেন প্রবীণ মালিক। বলেন, ‘‘অমরনাথ যাত্রা আসলে কাশ্মীরের সংস্কৃতির বাহক। তাই নিরাপত্তার এত কড়াকড়িও ঠিক না।’’