স্কুলে ফিরল ভূস্বর্গের ফুলগুলি

স্কুলের উঠোনে ফের হাসির হাট। ক্লাসঘরে হুল্লোড়। দীর্ঘ আট মাস পরে আজ ফিরে পেল ওরা। ফিরে পেল স্কুলের পড়াশোনা। বরফে মোড়া উত্তর কাশ্মীরের কিছু অংশ বাদে জম্মু-কাশ্মীরের বন্ধ হয়ে থাকা স্কুলগুলি খুলল আজ।

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০৩:৪০
Share:

ক্লাসঘরে: আট মাস পরে শ্রীনগরের একটি স্কুলে। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

স্কুলের উঠোনে ফের হাসির হাট। ক্লাসঘরে হুল্লোড়। দীর্ঘ আট মাস পরে আজ ফিরে পেল ওরা। ফিরে পেল স্কুলের পড়াশোনা। বরফে মোড়া উত্তর কাশ্মীরের কিছু অংশ বাদে জম্মু-কাশ্মীরের বন্ধ হয়ে থাকা স্কুলগুলি খুলল আজ। এত দিন পাট করে রেখে দেওয়া স্কুলের পোশাক গায়ে চাপিয়ে বন্ধুদের মাঝে ফিরতে পেরে স্বাভাবিক ভাবেই খুশির হাওয়া স্কুল-পড়ুয়াদের মধ্যে। কিন্তু আতঙ্ক যাচ্ছে না তা-ও। আবার যদি ফিরে যেতে হয় মনমরা সেই দিনগুলিতে! বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উদ্দেশে তাই একটাই আর্তি তাদের, দোহাই, কথায় কথায় বন্‌ধ ডেকে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে দিও না।

Advertisement

সরকারি ভাবে অবশ্য উপত্যকার স্কুলগুলি বন্ধ হয়েছিল গত ১৫ ডিসেম্বর। বাস্তবে, স্কুলের পাঠ শিকেয় উঠেছিল গত ৮ জুলাই হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকেই। উপত্যকা জুড়ে অশান্তির আগুন মাথা চাড়া দেয়। মাস পাঁচেকের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে মারা যান ৯৭ জন। দু’পক্ষ মিলিয়ে জখম হন কয়েকশো।

কিন্তু হিংসা-অশান্তি আগেও দেখেছে ভূস্বর্গ। এ বারেই প্রথম বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিশানা করতে থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে। পাঁচ মাসে পোড়ানো হয় অন্তত ৩০টি স্কুল। আগামী প্রজন্মকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে রাখার এই ষড়ষন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব হতে শুরু করেন উপত্যকার মানুষ। অবশেষ অশান্তির আঁচ কমে আসায় মেহবুবা মুফতির সরকার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল খোলার। গত নভেম্বরে ১০ ও ১২ ক্লাসের পরীক্ষা হয়েছে। বাকি পড়ুয়াদের যাতে বছর নষ্ট না হয় সে জন্য সব ছাত্রছাত্রীকে পরের শ্রেণিতে তুলে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।

Advertisement

শিক্ষক ও অভিভাবকেরা এ নিয়ে ততটা খুশি নয়। তবে স্বস্তিতে তাঁরাও। অনেকের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেল, খালি পড়ে থাকা বাগিচায় ফুল ফুটতে দেখলে মালিদের যেমনটি মনে হয়, তাঁদেরও মনের অবস্থা কম-বেশি সেই রকম। কিন্তু স্কুলের ছেলেমেয়েদের ক্ষোভ যাচ্ছে না। তাদের বক্তব্য, ক্লাসে ওঠাটাই সব নয়। শেখার উদ্দেশ্যেই স্কুলে আসে তারা।

এক নামি মিশনারি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে মহম্মদ ইশতিয়াক। তার কথায়, ‘‘অশান্তিতে আমাদেরই ক্ষতি হয়ে গেল সব চেয়ে বেশি। মূল্যবান সময় খোয়ালাম আমরা।’’ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘‘আমাদের কথা ওঁরা ভাবেন না মোটে। ওঁদের ছেলেমেয়েরা তো বিদেশে পড়ে!’’

আর এক পড়ুয়া মহম্মদ ইউনিসের আর্তি, ‘‘টাকাপয়সার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। শিক্ষার ক্ষতি পূরণ হয় না। এই বছরটা যেন আর বন্‌ধ না হয়।’’ কাশ্মীর জুড়ে স্কুলে স্কুলে আজ একটাই প্রার্থনা করেছে ছেলেমেয়েরা, ভূস্বর্গে শান্তি আসুক নেমে।

দিনের শেষে শ্রীনগরের পথে আজ ফিরে এসেছিল যানজট। স্কুলবাসগুলি আবার পথে নেমেছে যে! বাসের জানলায় ফের চেনা কচিকাঁচাদের মুখগুলি দেখে খুশি পথের পাশের এক বৃদ্ধ দোকানি। বললেন, ‘‘এই যানজটই তো স্বস্তির!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement