ফাইল চিত্র
আফগানিস্তানে ফের তালিবানের ক্ষমতা দখলে জম্মু-কাশ্মীর নতুন করে অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদী সরকার গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানালেও স্বরাষ্ট্র কর্তাদের মতে তালিবানের আফগানিস্তান দখল নিরাপত্তাজনিত বড়সড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল ভারতকে। কয়েক জন পুলিশকর্তার মতে, তালিবানের ক্ষমতায় ফেরাকে কাজে লাগিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে নতুন করে জঙ্গি গতিবিধিতে ইন্ধন জোগাবে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। আবার পাল্টা যুক্তিতে বলা হচ্ছে, এই তালিবান কুড়ি বছরের আগের তালিবানের চেয়ে আলাদা। এরা ক্ষমতায় থাকতে ইচ্ছুক। তাই গোড়াতেই অন্তত ভারতের চিন্তা করার কিছু নেই। আফগানিস্তানে পালাবদলের পরে ভারতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে আজ জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলা কমিটির বৈঠক ডাকেন ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা।
গত দেড়-দু্’বছরে জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। কমেছে অনুপ্রবেশও। কিন্তু তালিবানের ক্ষমতা দখলে উপত্যকার পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন ডিজি এসপি বৈদ্য। তিনি জানান, এই পরিস্থিতির সুবর্ণ সুযোগ নিতে পারে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। তালিবানের বেশ কিছু ভাড়াটে জঙ্গিকে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপে গতি আনতে পাঠানোর পরিকল্পনা নিতে পারে তারা। কুড়ি বছর আগে ওই প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তালিবান জঙ্গিদের জম্মু-কাশ্মীরে পাঠানো শুরু করেছিল পাকিস্তান। ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে ‘বাফার জ়োন’ হিসেবে রয়েছে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর। মূলত আইএসআই পরিচালিত জইশ ই মহম্মদ ও লস্কর ই তইবার জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির অধিকাংশ সক্রিয় রয়েছে ওই অধিকৃত কাশ্মীরেই। যেগুলিতে নিরন্তর নজর রয়েছে ভারত ও আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলির। বৈদ্যের মতে, পাকিস্তান নিজের দিক নজর ঘোরাতে এ বার সেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির অধিকাংশ আফগানিস্তানে সরিয়ে দিতে পারে। যাতে পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার সরাসরি অভিযোগ থেকে বাঁচতে সক্ষম হয় ইসলামাবাদ।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ সঙ্কট মোকাবিলা কমিটির বৈঠক ডাকেন ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা। ওই দেশে আটক ভারতীয় সরকারি কর্মচারী, আইটিবিপি-র জওয়ানদের কী ভাবে ভারতে ফেরানো যায় তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে এর কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্রের মতে, ভারতের জন্য পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগের। কারণ, আইএসআই আফগানিস্তানে ক্ষমতা বদলকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে জম্মু-কাশ্মীরে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করবে বলেই আশঙ্কা। অতীতেও দেখা গিয়েছিল, আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পরে তালিবানের একাংশকে কাশ্মীর ফ্রন্টে ঠেলে দিয়েছিল পাকিস্তান। স্থানীয় জঙ্গিদের চেয়ে তালিবান জঙ্গিরা অনেক বেশি প্রশিক্ষিত ও যুদ্ধে লড়ার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। ফলে তাদের সামলানো অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের বলেই মত এক স্বরাষ্ট্র কর্তার। তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধই তালিবানের আয়ের উৎস। স্বভাবতই কাবুল দখলের পরে বড় সংখ্যক তালিবান যোদ্ধা কর্মহীন হয়ে পড়বে। যাদের কাশ্মীরে ফ্রন্টে ব্যবহার করতে পারে আইএসআই।’’ পাশাপাশি আফগান সেনার কাছ থেকে অনেক আধুনিক অস্ত্র এখন তালিবানের হাতে গিয়েছে বলে মত ভারতীয় গোয়েন্দাদের। ফলে তালিবান জঙ্গিদের মোকাবিলা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। দিল্লির আশঙ্কা, শীত পড়ার আগেই তালিবান জঙ্গিদের একটি বড় দলকে কাশ্মীর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা চালাবে আইএসআই। বিজেপি নেতা রাম মাধবের কথায়, ‘‘তালিবানের কাছে প্রায় ত্রিশ হাজার লড়াকু যোদ্ধা রয়েছে। যাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে আইএসআই। পাকিস্তানের সাহায্য নিয়ে ওই যোদ্ধাদের এ বার অন্যত্র নিয়োগ করবেন তালিবান নেতৃত্ব।’’ ভারতকে তাই নিরাপত্তাক্ষেত্রে বড় মাপের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্রের মতে, এখন অনুপ্রবেশ রোধে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারত। তাই অনুপ্রবেশ ঘটানো সহজ নয়। দিল্লির কর্তাদের মতে, আগামী দিনে চিন-পাকিস্তানের সঙ্গে তালিবানের একটি অক্ষ তৈরি হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। যা
যথেষ্ট দুশ্চিন্তার।
তবে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের আর এক প্রাক্তন ডিজি তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রাক্তন পরামর্শদাতা অশোক প্রসাদের মত অবশ্য ভিন্ন। তিনি মনে করেন, ভারতের সাবধান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে ঠিকই। কিন্তু আশু ভয়ের কিছু নেই। কারণ নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগে যে তালিবান আফগানিস্তান দখল করেছিল তাদের থেকে এই তালিবানের কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সে সময়ে ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কার্যত ধর্মযুদ্ধে নেমেছিল ওই তালিবান। কিন্তু এখন যে তালিবান কাবুলের মসনদের দখল নিয়েছে তাদের লক্ষ্য হল ক্ষমতা দখল। এদের প্রথম ও প্রাথমিক লক্ষ্যই হল বিশ্বের কাছে স্বীকৃতি আদায় করা। তাই তারা গোড়াতেই এমন কোনও হিংসাত্মক কার্যকলাপ করবে না যাতে বিশ্বের কাছে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। সেই কারণে এ যাত্রায় ক্ষমতা দখল করলেও যথাসম্ভব হিংসার রাস্তা এড়িয়ে চলেছে তালিবান। তবে অশোক প্রসাদের মতে, পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই শেষ পর্যন্ত কী পরিকল্পনা নিয়ে এগোয় তার উপরে সব কিছু নির্ভর করছে। সে ভাবে সতর্ক থাকতে হবে ভারতকে।