নিহত করণী সেনার প্রধান সুখদেব সিংহ গোগামেদি। —ফাইল চিত্র।
রাজস্থানের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন নিহত করণী সেনার প্রধান সুখদেব সিংহ গোগামেদির স্ত্রী শীলা শেখাওয়াত। তাঁর দাবি, প্রাণসংশয় রয়েছে এ কথা জানিয়ে রাজস্থানের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত এবং রাজ্য পুলিশের প্রধানকে চিঠি লিখেছিলেন সুখদেব। কিন্তু তাতেও নাকি উপযুক্ত কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
সুখদেব খুন হওয়ার পরেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শীলা। অভিযোগপত্রে তিনি লেখেন, “করণী সেনার নেতাকে যে হত্যা করার চেষ্টা হতে পারে, সে কথা গত ফেব্রুয়ারিতেই রাজস্থান পুলিশের ডিজিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল পঞ্জাব পুলিশ। কিন্তু তার পরেও কোনও অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি আমার স্বামীকে।” তাঁর স্বামীকে কেন মেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছিল, এই প্রশ্নের উত্তরে শীলার দাবি, সুখদেব জাতীয় এবং আম্তর্জাতিক স্তরে একাধিক সামজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। তাই তাঁর অনেক শত্রু হয়ে গিয়েছিল।
ইতিমধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন গ্যাংস্টার রোহিত গোদারা। রোহিত বর্তমানে কানাডার বাসিন্দা। সে দেশেই থাকেন আর এক গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই, রোহিত আবার যাঁর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজস্থানের জয়পুরে ‘শ্রী রাষ্ট্রীয় রাজপুত করণী সেনা’র সভাপতি গোগামেদিকে গুলি করে খুন করা হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, নিহত নেতার সামনে বসে রয়েছেন কয়েক জন। গোগামেদি যখন নিজের ফোন দেখতে ব্যস্ত, সেই সময় হঠাৎই উঠে দাঁড়িয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকেন তাঁরা। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, গোগামেদিকে লক্ষ্য করে মোট ৫টি গুলি চালানো হয়। শেষ গুলিটি নিহতের মাথায় লাগে।
রাজপুত প্রভাবিত করণী সেনার নরমপন্থী গোষ্ঠীর নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন গোগামেদি। জয়পুর পুলিশ জানায়, শ্যামনগর এলাকায় সুখদেবের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে গুলি করে খুন করে কয়েক জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন জন সশস্ত্র দুষ্কৃতীর মধ্যে এক জনকে পাল্টা গুলি চালিয়ে হত্যা করেন গোগামেদির এক নিরাপত্তারক্ষী। বাকি দু’জন চম্পট দেয়। রাজপুত নেতার হত্যার খবর প্রকাশ্যে আসতেই চুরু, উদয়পুর, আলওয়ার, যোধপুরের নানা জায়গায় বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়।
২০১৮ সালে পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ছবি ‘পদ্মাবতের’ বিরুদ্ধে হিংসাত্মক আন্দোলন করে শিরোনামে এসেছিল কট্টরপন্থী রাজপুত নেতা লোকেন্দ্র সিংহ কালভি প্রতিষ্ঠিত ‘শ্রী রাজপুত করণী সেনা’। এমনকি, শুটিংয়ের সময় করণী সেনার সমর্থকদের হাতে আক্রান্তও হয়েছিলেন ভন্সালী। সে সময় লোকেন্দ্রর ওই হিংসাত্মক আন্দোলনের প্রতিবাদ করেছিলেন নরমপন্থী রাজপুত নেতা সুখদেব এবং যোগেন্দ্র সিংহ কাতার। নতুন সংগঠন ‘শ্রী রাষ্ট্রীয় রাজপুত করণী সেনা’ গড়েছিলেন তাঁরা।
গোগামেদি খুন হওয়ার পরেই উত্তপ্ত রাজস্থান। সম্প্রতি সেখানে বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরিয়েছে। কংগ্রেসকে হারিয়ে সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি। এই আবহে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। খুনের প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে বুধবার রাজ্যে ১২ ঘণ্টা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। মূলত গোগামেদির সমর্থকেরাই এই বন্ধের ডাক দিয়েছিলেন।