এভাবেই বানভাসিদের বিস্কুটের প্যাকেট ছুড়ে দেন মন্ত্রী এইচ ডি রেভান্না
বন্যা, খরায় নেতা-মন্ত্রীদের ত্রাণ বিলি নতুন কিছু নয়। মাঝে মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখিও হতে হয়। কিংবা বিলাসবহুল হাই প্রোফাইল নিরাপত্তায় অভ্যস্ত নেতা-মন্ত্রীরা সর্বহারা, বুবুক্ষু, গরিব অসহায় লোকজনের মাঝে গিয়ে ইতস্তত বা বিরক্তি বোধ করার ছবিও অনেক সময় ধরা পড়েছে। কিন্তু এতটা নির্লজ্জ, এতটা ঔদ্ধত্যের ছবি বোধহয় এর আগে দেখেনি ভারতবর্ষ।
ত্রাণ বিলির নামে বিস্কুটের প্যাকেট ছুড়ে দিচ্ছেন এক মন্ত্রী। শুধু মন্ত্রীই নন, তিনি আবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ভাই। কর্নাটকের এই ছবি দেখে লজ্জায় মুখ ঢেকেছে গোটা দেশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় আছড়ে পড়েছে ক্ষোভ, নিন্দার ঝড়। যদিও ভাইয়ের হয়ে ব্যাট ধরেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী। সাফাই দিয়েছেন মন্ত্রী নিজেও।
অথচ মাত্র দু’দিন আগেই উল্টো ছবি দেখা গিয়েছে বন্যা দুর্গত আর এক রাজ্য কেরলে। সেখানে দুর্গতদের উদ্ধারের আর্জি জানিয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেছেন চেঙ্গানুরের বিধায়ক সাজি চেরিয়ান। হেলিকপ্টার চেয়ে উদ্ধারের জন্য তাঁর সেই আর্তনাদ, সেই হাহাকার শুনে চোখে জল এসে গিয়েছে অনেকের। বিধায়কের আর্তি শুনে ছুটে গিয়েছে সেনার হেলিকপ্টার। উদ্ধার শুরু হয়েছে দুর্গতদের।
গত কয়েকদিন ধরেই বানভাসি কর্নাটকের একাধিক জেলা। হাসান তার মধ্যে অন্যতম। সেখানকার রমন্থপুরা গ্রামে পরিস্থিতি দেখতে যান কর্ণাটকের পূর্তমন্ত্রী এইচডি রেবান্না। প্রথমে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর শুরু করেন ত্রাণ বিলি। সেটা করতে গিয়েই বিপত্তি বাধিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর ভাই রেভান্না। দুর্গতদের উদ্দেশে বিস্কুটের প্যাকেট ছুড়ে দিতে শুরু করেন।
বাড়িঘর ছেডে় ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ক্ষুধার্ত বানভাসিদের অনেকেই সেগুলি লুফে নেন। তবে অনেকেই আবার অসম্মানের দান গ্রহণ করতে চাননি। তাঁদের বক্তব্য, এভাবে বিস্কুটের প্যাকেট ছুড়ে দিয়ে কার্যত বন্যা দুর্গতদের কুকুর-বেড়ালের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন মন্ত্রী। এই অপমান করার কোনও অধিকার নেই তাঁর।
আরও পড়ুন: কেরলের বন্যাকে জাতীয় বিপর্যয় মনেই করছে না মোদী সরকার।
যদিও এত কিছুর পরও ক্ষমা চাওয়া বা ভুল স্বীকারের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর তরফে। ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী বলেছেন, ‘‘ওখানে হাতে হাতে ত্রাণ বিলির মতো পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না। তাই ওইভাবে দিতে বাধ্য হয়েছেন মন্ত্রী।’’ বিস্কুটের প্যাকেট ছোড়া মন্ত্রী রেভান্না আবার জায়গার অপ্রতুলতার পাশাপাশি প্রচুর লোক সমাগমের অজুহাত দিয়েছেন। সঙ্গে কুম্ভীরাশ্রুর মতো বোঝাতে চেয়েছেন, যেভাবে সংবাদ মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, তাতে তিনি ‘ব্যথিত’। যোগ করেছেন, ‘‘আমার বদলে অন্য কাউকে দিয়ে ত্রাণ বিলি করলে এত বিতর্ক হত না।’’
আরও পড়ুন: বৃষ্টি মাথায় দু’ঘণ্টা টানা হেঁটে ট্রেন ধরলাম
কিন্তু তাতে বিতর্ক থামেনি। পিছু ছাড়েনি সোশ্যাল মিডিয়াও। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে মন্ত্রীর বিস্কুট ছোড়ার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। উদ্ধত, কাণ্ডজ্ঞানহীন, বর্বরোচিত, বানভাসিদের অপমান— এরকম বাছা বাছা বিশেষণে মন্ত্রীকে আক্রমণ করছেন নেটিজেনরা।
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।