প্রতীকী ছবি। — ফাইল চিত্র।
চাকরি ক্ষেত্রে সংরক্ষণ বিল নিয়ে সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার বিতর্কে কর্নাটক সরকার। এ বার নাকি আইটি কর্মীদের দৈনিক কাজের সময়সীমা ১০ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা করার কথা ভাবছে রাজ্য! সম্ভাব্য নতুন প্রস্তাবের কথা প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজের সময় বাড়ানোর জন্য কর্নাটক সরকার ইতিমধ্যেই ‘কর্নাটক দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৬১’ সংশোধন করার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও বিষয়টি এখনও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। এর পরেই সমালোচনায় মুখর হয়েছে ট্রেড ইউনিয়নগুলি।
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ‘আইটি, আইটিইএস কিংবা বিপিও ক্ষেত্রে কর্মরত এক জন কর্মচারীকে প্রয়োজনে দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি অতিরিক্ত সময় কাজ করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে, তবে একটানা তিন মাসে ১২৫ ঘণ্টার বেশি নয়।’ প্রসঙ্গত, শ্রম আইন অনুযায়ী বর্তমানে দৈনিক কাজের সময়সীমা সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা, এবং সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা। ১৪ ঘণ্টার (১২+ ২) কর্মদিবসের প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনার জন্য শ্রম বিভাগ রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছে বলে জানা গিয়েছে। এর পরেই কর্নাটক রাজ্য আইটি/আইটিইএস এমপ্লয়িজ় ইউনিয়নের (কেআইটিইউ) সদস্যরা প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ লাড, শ্রমবিভাগের প্রধান সচিব মহম্মদ মহসিন এবং আইটি-বিটি বিভাগের প্রধান সচিব একরূপ কৌরের সঙ্গে দেখা করেছেন বলে খবর।
কেআইটিইউ-এর সম্পাদক সুরজ নিদিয়াঙ্গা জানান, এই প্রস্তাবে এক জন কর্মচারীর প্রতিদিনের সর্বোচ্চ কর্মসময়ের কোনও উল্লেখ নেই। অর্থাৎ, খসড়াটিতে তিন মাসে অতিরিক্ত ১২৫ ঘণ্টার কথা বলা থাকলেও কোম্পানিগুলি চাইলেই কর্মীদেরকে দিনে, এক সপ্তাহে কিংবা এক মাসে ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়ে যেতে পারে যত ক্ষণ না তা ১২৫ ঘণ্টা অতিক্রম করছে। এ ছাড়া, এত দিন দৈনিক ৮ ঘণ্টার হিসাবে তিনটি শিফটে কাজ হত। এখন ১২ ঘণ্টার কর্মদিবস চালু হলে তিনটি শিফটের পরিবর্তে মাত্র দু’টি শিফটই যথেষ্ট। ফলে কর্মীদের এক তৃতীয়াংশকে সহজেই ছাঁটাই করে দেওয়া যাবে। তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে— তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুরজ।
এই প্রস্তাবকে ইতিমধ্যেই ‘অমানবিক’ বলে সমালোচনা করেছে ট্রেড ইউনিয়নগুলি। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি দেশের অগ্রগতির স্বার্থে যুবসমাজকে সাপ্তাহিক ৭০ ঘণ্টা কাজের নিদান দিয়েছিলেন, তখনও দেশজুড়ে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। এখন যেন সেই পথেই হাঁটতে চলেছে কর্নাটক!
কয়েক দিন আগেই বেসরকারি চাকরিতে স্থানীয়দের সংরক্ষণের জন্য নতুন আইন চালুর ইঙ্গিত দিয়েছে কর্নাটকের কংগ্রেস পরিচালিত সরকার। প্রস্তাবিত বিলে বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য ৭০ শতাংশ কর্মী এবং ৫০ শতাংশ আধিকারিকের পদ কন্নড়ভাষীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা বাধ্যতামূলক হবে, বুধবার এমনটাই জানিয়েছিলেন সে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ লাড। বলেছিলেন, ‘‘মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব পাশ হয়েছে। শীঘ্রই বিল বিধানসভায় পেশ করা হবে।’’ এই ঘোষণার পরেই রাজ্যের বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা কন্নড় সংরক্ষণ নিয়ে আপত্তি জানাতে শুরু করে। তাদের দাবি, এই বিল পাশ হলে তা রাজ্যের প্রযুক্তি শিল্পের বৃদ্ধিকে স্তিমিত করে দেবে এবং চাকরির বাজারকে প্রভাবিত করবে। ন্যাসকম তাদের বিবৃতিতে বলে, “আমরা এই বিলের প্রস্তাবগুলি নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং রাজ্য সরকারকে বিলটি প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করছি। এই বিল পাশ হলে রাজ্যের অগ্রগতি বিপরীতগামী হবে। বিভিন্ন সংস্থা তাদের ব্যবসা সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইবে।” সেই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আলোচনায় কর্নাটক।