গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কুমারস্বামী কি বাঁচাতে পারবেন তাঁর সরকারকে, না কি শেষমেশ আত্মসমর্পণ করতে হবে বিদ্রোহী বিধায়কদের কাছে? গোটা দেশের নজর এখন সে দিকেই। কর্নাটকের এই জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই মঙ্গলবার ইস্তফা দিলেন আরও এক কংগ্রেস বিধায়ক। তিনি কংগ্রেসের বহিষ্কৃত বিধায়ক রোশন বেগ। দল পরিষদীয় বৈঠক ডেকে যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময়ে বিধায়কের ইস্তফা জোট সরকারের বিপদ আরও বাড়াল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যদিও স্পিকার রমেশ কুমার এ দিন জানান, বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের আলাদা আলাদা ভাবে এসে তাঁর কাছে এসে তাঁদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে। স্পিকার বলেন, “কেউ যদি এ ব্যাপারে দেখা করতে চান, তা হলে আমার দফতরের অনুমতি নিয়েই আসতে হবে তাঁদের।” কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন চাপের মুখে পড়েই ইস্তফা দেওয়া হয়েছে, তা হলে সেই ইস্তফাপত্র গৃহীত হবে না বলেও জানান স্পিকার। এর পরই কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দরামাইয়া বিক্ষুব্ধদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন স্পিকারকে।
স্পিকার রমেশ কুমার বিধায়কদের ইস্তফার বিষয়টি মঙ্গলবার দেখবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ হাজির। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। সুতোয় ঝুলে থাকা কুমারস্বামীর ভাগ্য নির্ভর করছে স্পিকারের সিদ্ধান্তের উপর। ১৩ জন বিদ্রোহী বিধায়কের ইস্তফাপত্র যদি এ দিন গৃহীত হয়, তা হলে জোট সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও প্রকট হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন: সব্যসাচী-কাণ্ডের জল আরও ঘোলা, অনাস্থার প্রস্তুতি ফিরহাদের, পাল্টা চ্যালেঞ্জও
বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের ইস্তফাপত্র গ্রহণ না করার জন্য স্পিকারকে আর্জি জানিয়েছে কর্নাটক কংগ্রেসের আইনি বিভাগও। তাদের অভিযোগ, ইস্তফাপত্র দেওয়ার সময় কোনও নিয়ম মানা হয়নি। তবে স্পিকার রমেশ কুমার জানিয়েছেন, আইন মেনেই সব সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করতে এ দিন সকালেই বেঙ্গালুরুতে পরিষদীয় দলের বৈঠকে বসে কংগ্রেস। সূত্রের খবর, রামলিঙ্গ রেড্ডি, অঞ্জলি নিম্বলকর, এস রামাপ্পা, রোশন বেগের মতো শীর্ষ সারির নেতারা বৈঠকে যাননি। আরও বেশ কয়েক জন নেতাও গরহাজির ছিলেন। বৈঠকে কংগ্রেস নেতাদের গরহাজিরার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
সরকারকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টার কসুর রাখছেন না কংগ্রেস-জেডিএস নেতৃত্ব। বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের মন্ত্রিসভায় জায়গা করে দিতে দুই দলেরই সব মন্ত্রী ইস্তফা দেন সোমবার। কিন্তু তাতেও সঙ্কট কাটেনি। বিক্ষুব্ধদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জোট সরকারের নেতারা। কংগ্রেস তাদের বিধায়কদের মুম্বইয়ের হোটেল থেকে সরিয়ে পুণে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। পরে ঠিক হয়, পুণে নয় গোয়াতে নিয়ে গিয়ে রাখা হবে বিধায়কদের। সূত্রের খবর, মুম্বইয়েরই কোনও একটি গোপন জায়গায় রাখা হয়েছে কংগ্রেসের বিধায়কদের।
আরও পড়ুন: ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, চূড়ান্ত সতর্কতা জারি মুম্বইয়ে
কংগ্রেস-জেডিএস নেতৃত্ব বার বারই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই সঙ্কটময় পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইছে বিজেপি। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে ঘোড়া কেনাবেচা করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। সোমবার নির্দল বিধায়ক তথা মন্ত্রী নাগেশ ইস্তফা দেন। তার পরই কংগ্রেস-জেডিএস অভিযোগ তোলে নাগেশকে চাপ দিয়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য করিয়েছে বিজেপি।
কর্নাটকের এই পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার উত্তাল হয় লোকসভাও। সেখানেও বিজেপিকে আক্রমণ করে কংগ্রেস। তবে তাদের সব অভিযোগ খারিজ করে দেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।