কর্নাটকে ক্ষমতা ধরে রাখলেন ইয়েদুরাপ্পা সরকার।
মহারাষ্ট্রে হতাশ হতে হলেও কর্নাটকে স্বমহিমা বজায় রাখল বিজেপি। কর্নাটক উপনির্বাচনের পরীক্ষায় তুমুল সাফল্যের সঙ্গে উতরে গেল ইয়েদুরাপ্পা সরকার। এই জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য, ‘‘কর্নাটকের মানুষ কংগ্রেসকে শিক্ষা দিয়েছে। স্থিতিশীল সরকারকেই শক্তি জুগিয়েছে জনতা।’’ অন্য দিকে, পরাজয় মেনে নিয়েও কংগ্রেসের কটাক্ষ, ‘‘দলত্যাগীদেরই মেনে নিয়েছেন ভোটাররা’’।
কর্নাটক বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখার জন্য বিজেপির প্রয়োজন ছিল কমপক্ষে ছ’টি আসনে জেতার। তবে সোমবার ভোটগণনা শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই দেখা গেল, কংগ্রেস এবং জেডিএসকে পিছনে ফেলে বহু দূর এগিয়ে গিয়েছে ইয়েদুরাপ্পার দল। ১৫টি আসনের মধ্যে ১২টিতেই হয় জয় এসেছে নাহয় এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। মাত্র দু’টি আসনে জিতেছে কংগ্রেস। জেডিএসের হাতে আসেনি কোনও আসনই। ১টি আসনে জিতেছেন কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী।
এই বিরাট জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেসকে শিক্ষা দিয়েছে কর্নাটকের মানুষ।’’ এ দিন ঝাড়খণ্ডে একটি জয়সভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে মোদী আরও বলেন, ‘‘কর্নাটকের মানুষ আজ নিশ্চিত করে দিয়েছে যে কংগ্রেস এবং জেডিএস ওখানকার মানুষদের সঙ্গে আর বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবে না। ভাঙাচোরা সরকার নয়, কর্নাটকের মানুষ ওখানে একটি স্থিতিশীল এবং মজবুত সরকারকে শক্তি দিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: শিয়া মুসলিমদেরও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের অন্তর্ভুক্ত করা হোক, চিঠি শাহকে
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এ দিন সকাল থেকেই ভোটগণনা শুরু হতেই বিজেপি শিবিরের জয়ের ইঙ্গিত মিলতে শুরু করে। সরকারি ভাবে ঘোষণার আগেই দেখা যায় ইয়েদুরাপ্পা তাঁর ছেলে বি ওয়াই বিজয়েন্দ্রকে মিষ্টি খাইয়ে জয়ের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘সকলেই আমাদের সমর্থন করেছেন। তাঁদের চেষ্টাতেই আমরা ১২টার মতো আসনে জয় পেয়েছি। এখনও ১টা-২টো আসনের ফলাফলের খবর পাওয়া বাকি। আমরা স্থিতিশীল সরকার দেব।’’
তবে বিজেপি শিবিরে উল্লাস থাকলেও স্বাভাবিক ভাবেই এই শোচনীয় হারের পর কংগ্রেস শিবিরে বেজেছে বিষণ্ণতার সুর। পরাজয়ের পর কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সিদ্দারামাইয়া। তিনি বলেন, ‘‘পরিষদীয় দলনেতা হিসাবে গণতন্ত্রকে সম্মান দিতে হবে। কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে আমার ইস্তফার চিঠি সনিয়াজিকে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’
আরও পড়ুন: অদৃশ্য বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে সমালোচনায় শিবসেনা
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে লেখা সিদ্দারামাইয়ার ইস্তফাপত্র। ছবি: সংগৃহীত।
সিদ্দারামাইয়ার পর কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দীনেশ গুন্ডু রাও। তবে জনতার রায় মেনে নিয়েও আশাহত না হওয়ার কথা বলেছেন কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমার। উপনির্বাচনে এই হেভিওয়েট নেতারও হার হয়েছে। এ দিন শিবকুমার বলেন, ‘‘জনমতের সঙ্গে সহমত হতে হবে আমাদের। পরাজয় মেনে নিলেও তা নিয়ে ব্যথিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, উপনির্বাচন আরও বিধানসভার নির্বাচন এক বিষয় নয়। কংগ্রেসের শক্তিশালী ঘাঁটি হল কর্নাটক। এবং এ রাজ্য থেকে কংগ্রেস উবে যাবে না।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে ২২৪টি আসনের মধ্যে ২২২টি আসনে ভোট হয়েছিল। তাতে ১০৪টি আসনের দখল নিয়ে বৃহত্তম দল হিসাবে জিতলেও সরকার গঠন করতে পারেনি বিজেপি। কংগ্রেস এবং জেডিএসের জোটই সরকার গড়ে। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ক্ষমতায় আসেন এইচ ডি কুমারস্বামী। তবে গত জুলাইতে জোটের ১৭ জন বিধায়ক একসঙ্গে ইস্তফা দিলে দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁদের বিধায়ক পদ খারিজ করে দেন তৎকালীন স্পিকার কে আর রমেশ কুমার। পাশাপাশি, ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাঁরা ভোটে লড়তে পারবেন না বলেও নির্দেশ দেন তিনি। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান ওই বিধায়কেরা। তবে স্পিকারের সিদ্ধান্তে সম্মতি দিলেও ওই বিধায়কেরা ভোটে দাঁড়াতে পারবেন বলে জানিয়ে দেয় শীর্ষ আদালত। জোটের বিধায়কদের গণইস্তফায় পতন ঘটে এইচ ডি কুমারস্বামী সরকারের। ক্ষমতায় আসে বিজেপির ইয়েদুরাপ্পা সরকার। এর পর গত ৫ ডিসেম্বর ১৫টি আসনে উপনির্বাচন হয়। বাকি ২টিতে ভোট হয়নি। জোটের বদলে কংগ্রেস এবং জেডিএসের বিধায়কেরা আলাদা ভাবে ভোটে লড়েন।