সিদ্দারামাইয়া (বাঁ দিকে) ইয়েদুরাপ্পা।- ফাইল চিত্র।
কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের ফলাফলে দুর্নীতি কোনও ইস্যু হল না। ইস্যু হল না কল্যাণমুখী প্রশাসনিক কাজকর্ম। না, আঞ্চলিকতাও তেমন ভাবে ছাপ ফেলতে পারল না ভোটের ফলাফলে।
দুর্নীতি ইস্যু হলে বিজেপি-র ইয়েদুরাপ্পা হই হই করে জিততে পারতেন না। কারণ, দুর্নীতির অভিযোগে, খনি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েই আগের বার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল ইয়েদুরাপ্পাকে।
বিজেপি ওই কেলেঙ্কারিকে গুরুত্বই দেয়নি। তাই খনি কেলেঙ্কারিতে যাঁদের নাম জড়িত, বেল্লারির সেই দুই রেড্ডি ভাই আর তাঁদের আত্মীয়স্বজনকে ৮টি আসনে দলের টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। বিজেপি এই ভোটে যাঁদের দলীয় প্রার্থী করেছিল, তাঁদের ৩৭ শতাংশের বিরুদ্ধেই রয়েছে ফৌজদারি মামলা। আর খুন, ধর্ষণের মতো ফৌজদারি মামলা রয়েছে ২৭ শতাংশ বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে কংগ্রেস প্রার্থীরাও যে খুব পিছিয়ে, তা কিন্তু নয়। ২৫ শতাংশ কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা আর খুন, ধর্ষণের মতো ফৌজদারি মামলা রয়েছে ১৪ শতাংশ কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে। কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যার নিরিখেও কর্নাটকে এ বারের ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই রয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপি-র মধ্যে। কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়ানো প্রার্থীদের ৯৪ শতাংশই কোটিপতি আর বিজেপি প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তা ৯৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন- কর্নাটকে ম্যাজিক ফিগারের কাছে একা বিজেপি, কংগ্রেস হাত বাড়াল জেডি(এস) -এর দিকে
আরও পড়ুন- বিজেপির পাশে গেলে মায়া নেই
আঞ্চলিকতার তাস খেলেছিল কংগ্রেস, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার (সিড্ডু) নেতৃত্বে। বিহারে ভোটের আগে যেমন স্লোগান দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার, তেমনই ‘বিহারি বনাম বাহারি’ মডেল দিয়ে ভোটে উতরোনোর চেষ্টা করেছিলেন সিড্ডুও। সেই স্লোগানের পালে হাওয়া দিতে গত অর্থ কমিশনের সুপারিশে কর্নাটক যে দারুণ ভাবে বঞ্চিত হয়েছে, তা নিয়ে প্রচারে পিছপা হয়নি কংগ্রেস। লিঙ্গায়েত কার্ড, জাতপাতের ভোটব্যাঙ্ক, কর্নাটকের জন্য আলাদা পতাকা, বিজেপি-কে উত্তর ভারতের দল হিসেবে তুলে ধরা ও হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার চেষ্টা- আঞ্চলিকতায় উসকানি দিতে ওই সবক’টি কৌশলই প্রচারে ব্যবহার করেছেন সিদ্দারামাইয়া।
কিন্তু সে সবে কাজ হয়নি!
বিজেপি-কে রুখতে অ-হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে একজোট করারও খুব চেষ্টা করেছিলেন সিড্ডু। খুব সহজ কারণে। যেহেতু মুসলিম, দলিত ও উপজাতিরাই কর্নাটকে ভোটারদের ৩৯ শতাংশ। কিন্তু সিড্ডুর সেই ‘গেম’ও ব্যর্থ হয়েছে, অ-হিন্দু ভোট কংগ্রেস আর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার দল জেডি (এস) এবং মায়াবতীর দল বিএসপি-র মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায়।
লিঙ্গায়েতদের নিয়েও আরেকটা ‘খেলা’ খেলার চেষ্টা করেছিল কংগ্রেস, ক্ষমতার কুর্সিটা ধরে রাখতে। কর্নাটকে লিঙ্গায়েতরা অর্থনৈতিক ভাবে একটু পিছিয়ে পড়া আর ভোক্কালিগ্গারা একটু এগিয়ে থাকা শ্রেণির। সিড্ডু ওই লিঙ্গায়েতদের সংখ্যালঘু শ্রেণির মর্যাদা ও কিছু সুযোগসুবিধা দিয়ে কংগ্রেসের দিকে টেনে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। পারেননি, লিঙ্গায়েতদের মধ্যে বিজেপি-র ইয়েদুরাপ্পার জনপ্রিয়তার জন্য।
আবার ভোক্কালিগ্গাদেরও মন জয় করতে পারেননি, তাঁদের মধ্যে জেডি (এস) নেতা দেবগৌড়ার তুমুল জনপ্রিয়তার জন্য। মনে হচ্ছে, লিঙ্গায়েত ও ভোক্কালিগ্গা ভোট যাতে কংগ্রেসের ঝুলিতে না পড়ে, সে জন্য বিজেপি-র সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া হয়েছিল জেডি (এস)-এর।
কর্নাটকে ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেছেন, কংগ্রেস যদি কর্নাটকে বিধানসভা ভোটে এ বার জেডি (এস) এবং বিএসপি-র সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামত, তা হলে সেই জোট খুব ভাল ফল করত।
এই ভোটে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের অর্থবলের পাশাপাশি আর যেটা খুব শক্তিশালী ভূমিকা নিয়েছে, তা হল, ডেটা পাওয়ার। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন দল ও প্রার্থীরা যে ভাবে প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন, সন্দেহ নেই, তা দোদুল্যমান ভোটারদের যথেষ্টই প্রভাবিত করেছে।