সাসপেন্ডেড আপ নেতা কপিল মিশ্র।
রবিবার সন্ধ্যার মধ্যে ইস্তফা না দিলে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের জামার কলার ধরে তাঁর চেয়ার থেকে নামিয়ে তাঁকে তিহাড় জেলে টেনে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিলেন আম আদমি পার্টির (আপ) সাসপেন্ডেড নেতা কপিল মিশ্র।
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে কপিল অভিযোগ করেন, দেশ ও বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে আপ-এর তহবিলে দেওয়া অগণিত মানুষের অর্থ নিয়ে রীতিমতো নয়ছয় করেছেন কেজরীবাল আর তাঁর ঘনিষ্ঠ পারিষদরা। দলের তহবিল সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে তাঁরা ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। দলের ওয়েবসাইটেও তহবিল সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে তাঁরা আপ-এর সদস্য, সক্রিয় কর্মী ও সমর্থকদের ঠকিয়েছেন। সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে, তাঁদের দেওয়া টাকা আপ-এর তহবিলে জমা না দিয়ে দলের সুপ্রিমো কেজরীবাল আর তাঁর ঘনিষ্ঠরা সেই বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের ১৬টি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় রেখেছিলেন। তার কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করেন কপিল। ওই সব বিস্ফোরক অভিযোগ আর দাবির পর সাংবাদিক সম্মেলনের শেষের দিকে কপিল হঠাৎ অচৈতন্য হয়ে পড়েন। মাটিতে পড়ে যান। তখন ধরাধরি করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়ছয়ের জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে গত চার দিন ধরেই অনশন করছেন কেজরীবালের মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য কপিল। রবিবার ছিল তার পঞ্চম দিন।
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই আপ-এর ওয়েবসাইট দেখিয়ে কপিল অভিযোগ করেন, তহবিল সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে সেখানে। আপ-এর মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যাঁরা স্বেচ্ছায় দলের তহবিলে অকাতরে অর্থ দিয়েছিলেন, সেই সহানুভূতিপ্রবণ জনগণের সঙ্গেই প্রতারণা করেছেন কেজরীবাল ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা। কপিলের দাবি, ২০১৩-২০১৪ এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবর্ষে আপ-এর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আদতে যে পরিমাণ অর্থ ছিল, তার খুব সামান্যই জানানো হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। তহবিলে কত অর্থ জমা রয়েছে, সে সম্পর্কে দলের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছিল বিভ্রান্তিকর তথ্য।
সাংবাদিক সম্মেলনের শেষের দিকে অচৈতন্য হয়ে পড়েন কপিল মিশ্র
ব্যাঙ্কের কোনও প্রামাণ্য নথিপত্র দেখাতে না পারলেও এ দিন কপিলের দাবি, ২০১৩-২০১৪ অর্থবর্ষে আপ-এর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ছিল মোট ৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু সেই সময় দলের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছিল, তহবিলে রয়েছে ১৯ কোটি টাকা। সেই অঙ্কটা আরও কমিয়ে দেখানো হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। বলা হয়েছিল, দলের তহবিলে রয়েছে মাত্র ৯ কোটি টাকা।
কপিলের আরও দাবি, একই ভাবে ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষে আপ-এর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ছিল ৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু দলের তরফে ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছিল, তহবিলে রয়েছে ২৭ কোটি টাকা। আর নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়েছিল মাত্র ৩২ কোটি টাকা রয়েছে আপ-এর তহবিলে। কিছু নথিপত্র দেখিয়ে কপিল বলেন, ‘‘এই সব কাগজপত্র নিয়ে আমি সিবিআইয়ের কাছে যাব। ওরা (সিবিআই) তদন্ত করলে কেজরীবালকে সোজা জেলে যেতে হবে।’’
আরও পড়ুন- ওসামার মৃত্যুর ‘প্রতিশোধ’ চান ছেলে হামজা
সাসপেন্ডেড আপ নেতা কপিল মিশ্রের আরও অভিযোগ, ‘‘দলের বিধায়ক শিব চরণ গয়ালের চালানো ১৬টি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা বিপুল অর্থ দিয়েছিল কেজরীবালকে। আর সেই লেনদেনটা হয়েছিল ২০১৪-র ২০ জানুয়ারির মধ্য রাতে।’’
সাংবাদিক সম্মেলনের আগে এ দিন হনুমানজীর মন্দিরে পুজো দিয়ে আসেন কপিল। আর সাংবাদিক সম্মেলনের শেষের দিকে হঠাৎ অচৈতন্য হয়ে পড়ায় কপিলকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে।