বিচারপতি কে এম জোশেফ। —ফাইল চিত্র
তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগে জোরালো আপত্তি ছিল নরেন্দ্র মোদী সরকারের। তা সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম জেদ ধরায় তাঁকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগে বাধ্য হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
আজ রাফাল মামলার রায়ে সেই বিচারপতি কে এম জোসেফের রায়কেই আঁকড়ে ধরে ফের সরব হলেন রাহুল গাঁধী। আজ প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ রাফাল চুক্তিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতি জোসেফ বাকি দু’জনের সঙ্গে সম্মত হলেও তিনি বলেছেন, সিবিআই নিজে তদন্ত করতে চাইলে কোনও বাধা নেই। দুর্নীতি দমন আইনে ১৭এ ধারায় সিবিআইকে সরকারি কর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আগাম অনুমতি নিতে হয়। বিচারপতি জোসেফের যুক্তি, সেই অনুমতি নিয়ে সিবিআই তদন্ত করতেই পারে।
উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি কে এম জোসেফ সে রাজ্যে মোদী সরকারের রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল, সে কারণেই তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের ব্যাপারে মোদী সরকারের আপত্তি ছিল। তাঁর নিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রের টালবাহানায় অনেক দেরি হয়ে যাওয়ায় ২০১৮-র অগস্টে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে কে এম জোসেফ যখন শপথ নেন, তখন শীর্ষ আদালতের ২৫ জন বিচারপতির তালিকায় তিনি একেবারে শেষে। তালিকায় পিছিয়ে যাওয়ায় ২০২৩-এ পঞ্চম প্রবীণতম বিচারপতি তথা কলেজিয়ামের সদস্য হিসেবে অবসর নেবেন বিচারপতি জোসেফ। কিন্তু আগে শপথ নিলে তিনি ভবিষ্যতে তিন প্রবীণতম বিচারপতির তালিকায় চলে আসতেন। হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগে তিন প্রবীণ বিচারপতির কলেজিয়ামের সিদ্ধান্তেও তাঁর ভূমিকা থাকত।
আরও পড়ুন: নির্দেশ নয়, তবে হতেই পারে তদন্ত, সুপ্রিম কোর্টের রাফাল-রায়ে চাঙ্গা দু’পক্ষই
আরও পড়ুন: তদন্তের দাবিতে অটলই রাহুল
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ রবিবার অবসর নেবেন। তাঁর শেষ রায়গুলির মধ্যে অযোধ্যা মামলায় বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির তৈরিতে সায় দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। কর্নাটকে কংগ্রেস-জেডিএসের ১৭ জন দলত্যাগী বিধায়কের পদ খারিজের ব্যাপারে স্পিকারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখলেও তাঁদের উপনির্বাচনে লড়ার প্রশ্নে ছাড় দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির দফতরকে আরটিআই-এর আওতায় আনলেও শর্ত রেখেছেন। আজ রাফাল মামলায় তিনি তদন্তের নির্দেশ খারিজ করেছেন, রাহুল গাঁধীকে সতর্ক হতে বলে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা বন্ধ করেছেন। কিন্তু শবরীমালা নিয়ে সিদ্ধান্ত বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়েছেন।
আইনজীবীদের চোখে এই ‘ভারসাম্য রক্ষা’-র মধ্যেই বিচারপতি জোসেফের রায় মোদী সরকারের জন্য অস্বস্তির কাঁটা হয়ে উঠেছে। সার্বিক রায়ে বিজেপি নিজের জয় দেখলেও বিচারপতি জোসেফের রায় তাতে চোনা ফেলেছে।