সি এস কারনান
নজিরবিহীন ভাবে আদালত অবমাননার মামলায় তাঁকে তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিচার এবং প্রশাসনিক কাজ থেকেও। সেই তলব করা নিয়ে এ বার শীর্ষ আদালতের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি লিখে তোপ দাগলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনান। দলিত বলেই তাঁকে উচ্চবর্ণের বিচারপতিরা নিশানা করছেন বলে ওই চিঠিতে অভিযোগ করেছেন বিচারপতি সি এস কারনান।
কলকাতা হাইকোর্ট সূত্রের খবর, চিঠিতে প্রধান বিচারপতি জগদীশ সিংহ খেহরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন বিচারপতি কারনান। শীর্ষ আদালতের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে লেখা চিঠিতে বিচারপতি কারনানের আর্জি, বর্তমান প্রধান বিচারপতির অবসরের পর যেন তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া আদালত অবমাননার বিচার করা হয়। প্রয়োজন হলে বিষয়টি সংসদে পাঠানো হোক।
দেশের রাজনীতিতে দুর্নীতির অভিযোগ, জাতপাত বিদ্বেষ নিয়ে চাপানউতোর লেগেই থাকে। কিছু কিছু রাজ্যে আজও ভোটের নিয়ন্ত্রক তথাকথিত ‘দলিত’ কার্ড। কিন্তু দেশের একটি হাইকোর্টের দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত বিচারপতি চিঠি লিখে বিচারবিভাগে দলিতদের অবমাননার কথা বলছেন, এমন ঘটনা শেষ কবে ঘটেছে তা মনে করতে পারছেন না প্রবীণ আইনজীবীদের অনেকেই। হাইকোর্ট সূত্রের খবর, উচ্চবর্ণের বিচারপতিরা আইন নিজেদের হাতে নিয়ে তাঁর মতো দলিত সম্প্রদায়ের বিচারপতিকে সরাতে চাইছেন বলে চিঠিতে দাবি করেছেন বিচারপতি কারনান। তাঁর আরও অভিযোগ, আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে। এটা তফসিলি আইনের পরিপন্থী। চিঠিতে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁর বক্তব্য না শুনেই কেন আদালতে হাজির হতে বলা হল? তাঁকে যে ভাবে বিচার ও প্রশাসনিক কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ওই বিচারপতি। চিঠিতে তাঁর দাবি, এক জন কর্তব্যরত বিচারপতিকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা আদালতের নেই।
কখনও মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে, কখনও বিচারপতি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে, কখনও বা সুপ্রিম কোর্ট থেকে তাঁর বদলির নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কারনান। কলকাতা হাইকোর্টে বদলি হয়ে আসার পরে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় অভিযুক্তকে জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আচমকা সিদ্ধান্ত বদল করায় প্রবীণ এক বিচারপতির সঙ্গে এজলাসেই তাঁর মতানৈক্য হয়। তা নিয়ে বিতর্কও দানা বাঁধে। পরবর্তী কালে বিচারবিভাগের দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক দফতরে চিঠি লিখেছিলেন এই বিচারপতি। সেই সব অভিযোগ নিয়েই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে তাঁকে তলব করেছিল শীর্ষ আদালতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অবশ্য তাঁর চিঠিতে জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ ধোপে টেঁকে না। কারণ, বিচারবিভাগে দুর্নীতি ও অব্যবস্থা নিয়ে সরকারি দফতরকে জানিয়েছিলেন তিনি। রেজিস্ট্রার জেনারেলকে লেখা চিঠিতেও মাদ্রাজ হাইকোর্টের ২০ জন দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারপতির কথা লিখেছেন বিচারপতি কারনান।
আজ, সোমবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি-সহ সাত বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের সামনে কারনানের হাজির হওয়ার কথা। চিঠিতে কারনান হাজির হবেন কি না তা জানাননি। আইনজীবীদের অনেকের ব্যাখ্যা, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের সামনে হাজির না হলে আদালত অবমাননার অভিযোগ আরও চেপে বসতে পারে। সে ক্ষেত্রে এই বিস্ফোরক চিঠি লেখার পরে বিচারপতি কারনান সুপ্রিম কোর্টে হাজির হন কি না, তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে।