নরেন্দ্র মোদী নীরব থাকলেও তাঁর ভক্তেরা নীরবতার তোয়াক্কা করেননি গোড়ায়।
নীরব মোদী কেলেঙ্কারির উদয়ের পটভূমিতে পাল্টা গাঁধী পরিবারকে বিঁধেই আসরে নেমেছিল নরেন্দ্র মোদী শিবির। কিন্তু সেটাও গেল ব্যুমেরাং হয়ে!
প্রধানমন্ত্রীকে আড়াল করতেই তাঁকে ও মহাত্মা গাঁধীকে নিয়ে বাঁধা হয়েছিল চুটকি। মোদী অঝোরে কাঁদছেন। বলছেন, ‘‘নতুন মোদীরা আমার নাম বদনাম করছে!’’ শুনে গাঁধীজি বলছেন, ‘‘আ-হা, গাঁধী নামটার কি ওরা কম বদনাম করেছে?’’
এই সংলাপের অনুপ্রেরণাতেই জবাবি রসিকতা বিরোধীদের। তাতে স্বামী বিবেকানন্দ ওরফে নরেন্দ্রনাথ দত্ত সান্ত্বনা দিচ্ছেন নরেন্দ্রভাই মোদীকে। বলছেন, ‘‘বৎস কেঁদো না, আমার নরেন্দ্র নামটাও কম বদনাম হয়নি!’’
বাস্তবিক, মোদীকে নিয়ে হোয়াট্সঅ্যাপে চুটকি ঢুকছে ব্রেকিং নিউজের থেকেও দ্রুত। ফেসবুক, টুইটার নেট-রাজ্য ছেয়ে ফেলেছে ‘মোদী-জোকস’। প্রশ্ন উঠছে, এই রসিকতার আবহ এক বছর বাদে ভোটযুদ্ধে ছাপ ফেলবে কি?
‘‘এ সব চুটকি কিন্তু নীরবে জনমত গঠন করে!’’— মিটিমিটি হাসছেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। জরুরি অবস্থার ইন্দিরা গাঁধী থেকে বাম আমলে জ্যোতি বসুকে নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা ভূরি ভূরি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার চুটকি-মিমেও জলঘোলা কম হয়নি।
তবে নীরব কেলেঙ্কারির হাত ধরে নেট পরিসরে প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধবার জমি ভালই তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। পদবিতুতো মিল তো বটেই, দু’জনের নামের সংক্ষিপ্ত রূপও প্রায় এক। নমো এবং নিমো। টুইটারে ‘#ছোটামোদী’ বা ‘#জনধনলুটযোজনা’ হ্যাশট্যাগ-প্রচারে সরব রাহুল গাঁধী ও তাঁর দল কংগ্রেস। আর রসিক বাঙালি প্যারডিতে মেতেছে— ‘‘আমাদের ছোট মোদী চলে বাঁকে-বাঁকে / দাভোসের বৈঠকে শোভা হয়ে থাকে।’’ জনধনের ‘চৌকিদার’ নীরব কেন, প্রশ্ন তুলে ‘অ-সহজ পাঠ’ কবিতা বলছে, ‘‘ওপারেতে পিটে চলে ছাপ্পন ছাতি, এ পারেতে কুঁড়েঘর, কোথা নাই বাতি!’’
‘‘রাহুল গাঁধীকে নিয়ে ‘পাপ্পু জোকস’ তুলনায় সংগঠিত, পরিকল্পনামাফিক ছিল। মোদীকে নিয়ে রসিকতা ঢের স্বতঃস্ফূর্ত।’’— বলছেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। ‘‘লুটের জলসায় নীরব কেন মোদী’’ লিখে তিনি নিজেও ফেসবুকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় কমিউনিকেশন টিমের সদস্য অমিতাভ চক্রবর্তী প্রচারে রসবোধকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আগের জমানার দেওয়াল-লিখনের থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ বলেই তাঁর অভিমত।
এমন প্রচারে পথিকৃৎ বিজেপিকে আপাতত বিদ্রুপ গিলতে হচ্ছে। এ রাজ্যে তাদের অন্যতম মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য মনে করাচ্ছেন, ‘‘মোদীজিকে নিশানা করে রসিকতা আগেও কম হয়নি। দেশবাসী তাঁদের রাজনৈতিক বোধ দিয়েই সবটা বিচার করেছেন।’’
‘‘ভোট পরের কথা! সৃষ্টিশীল লোকের জন্য এখন হাসিই সম্বল।’’— বলছেন টিভি-রেডিওর সঞ্চালক মির। নীরব-কাণ্ডের পরে ফেসবুক লাইভে ২০ মিনিট মজাদার ভঙ্গিতে মুখে ব্যান্ডেজ বেঁধে শো করেন তিনি। কেন আপনি কিছু বলছেন না, জানতে চেয়ে দর্শক-শ্রোতারা হেসে কুটিপাটি।