যোধাইয়া বাই। ছবি: সংগৃহীত।
তিনি ছিলেন ইটভাটার শ্রমিক। ভাটা বন্ধ থাকায় মাঝে বেশ কিছু দিন নিজের আর দুই ছেলের পেট চালাতে চোলাই মদ বিক্রিও করতে হয়েছে। বয়স যখন ৭০-এর আশেপাশে, আর এক শ্রমিকের কাছে দেওয়াল চিত্রে হাতেখড়ি। মধ্যপ্রদেশের চিরাচরিত সেই চিত্রকলাকে আপন শিল্পী মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করেছেন একেবারে নিজস্ব একটি রীতি, সূক্ষ্মতা ও নান্দনিকতায় যা দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক কলা-রসিকদের নজর কেড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার গত বছর নারীশক্তি পুরস্কার দিয়েছে, এ বারে হয়েছেন পদ্মশ্রী। কিন্তু বসবাসের একটা পাকা ঘর আজও জুটল না ৮৪ বছরের যোধাইয়া বাইয়ের!
বছর খানেক আগে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাঁকে পাকা ঘরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেটা দিল্লিতে নারীশক্তি পুরস্কারের মঞ্চে। অশীতিপর যোধাইয়া বাইকে জড়িয়ে ধরে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “কিসের দুঃখ তোমার, আমাকে বলো মা!” অভয় পেয়ে বৃদ্ধা দিনমজুর তাঁকে বলেছিলেন, সারা জীবন মাটির বাড়িতে বড় কষ্টে কেটেছে। সরকারি আবাস প্রকল্পে একটা পাকা ঘর যদি মেলে, শেষ বয়সটা একটু স্বাচ্ছন্দে কাটে। শুনে প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন তাঁর দিকে। তার পরে বলেছিলেন, “আপনার পাকা বাড়ি আমি করে দেব।”
পুরস্কার নিয়ে ঘরে ফিরে এসেছিলেন মধ্যপ্রদেশের উমারিয়া জেলার লোরহা গ্রামের যোধাইয়া বাই। সে প্রতিশ্রুতির পরে বছর ঘুরতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় এক চিলতে পাকা বাড়ি পেতে অশক্ত বৃদ্ধা কখনও ধর্না দিয়েছেন জেলা শহরে, কখনও রাজধানী ভোপালে। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের সঙ্গে দেখা করে মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথাটা। মুখ্যমন্ত্রীও যোধাইয়াকে আশ্বাস দিয়েছেন, “হয়ে যাবে!” যোধাইয়ার প্রশ্ন, ক’টা দিনই আর বাঁচব। মরার পরে পাকা বাড়ি পেয়ে আর কাজ কী?
জেলার পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তা জানান, যোধাইয়া বাইয়ের বিষয়ে তিনি অবগত রয়েছেন। কিন্তু ভর্তুকিতে রান্নার গ্যাস ও বয়স্ক ভাতার মতো সরকারি প্রকল্পের সুযোগ ইতিমধ্যেই পেয়ে যাওয়ায় সরকারি নীতি মেনে আবাস যোজনায় তাঁর নাম ওঠেনি। তা ছাড়া যোধাইয়া বাইয়ের দুই দিনমজুর ছেলে আলাদা সংসার করে আবাস যোজনায় পাকা ঘর পেয়েছেন। সেটাও একটা প্রতিবন্ধকতা।
২৫ তারিখে ৯১ জন পদ্মপ্রাপকের যে তালিকা কেন্দ্র প্রকাশ করেছে, তাতে মুরাল শিল্পী যোধাইয়া বাইকে পদ্মশ্রী দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যোধাইয়া খুশি। কিন্তু পাকা ঘরের আক্ষেপ যাচ্ছে না তাঁর।