‘জোধা-আকবর’ ফিল্মে জোধাবাঈয়ের ভূমিকায় ঐশ্বর্যা রাই। ছবি: সংগৃহীত।
জোধাবাঈয়ের অস্তিত্ব নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুললেন গোয়ান এক লেখক। রাজপুত নন, জোধাবাঈ আসলে নাকি পর্তুগিজ ছিলেন। নিজের সাম্প্রতিক বইতে এমনটাই দাবি করেছেন লেখক লুই দি আসিস করেইয়া।
মুঘল সম্রাট আকবরের স্ত্রী ও জাহাঙ্গিরের মা হিসাবে জোধাবাঈয়ের নাম আছে ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু গত মাসে প্রকাশিত তাঁর বই ‘পর্তুগিজ ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য মুঘল রিলেশনস ১৫১০-১৭৩৫’-এ তা খণ্ডন করে নিজের যুক্তি দিয়েছেন করেইয়া। তাঁর মতে, জোধাবাঈ আসলে পর্তুগিজ মহিলা দোনা মারিয়া মাসকারেনহাস। পনেরোশো শতকের মাঝামাঝি আরব সাগরে পর্তুগিজ নৌজাহাজে আক্রমণ করেন গুজরাতের সুলতান বাহাদুর শা। সেই জাহাজেই ছিলেন দোনা মারিয়া ও তাঁর বোন জুলিয়ানা। দু’জনকেই বন্দি করে সম্রাট আকবরের দরবারে নিয়ে যান তিনি। আকবরকে ‘উপহার’ হিসাবে ওই দু’জনকে নিবেদন করেন বাহাদুর শা।
আরও পড়ুন
রিং-এর মধ্যেই বান্ধবীকে প্রোপোজ!
১৮ বছরের আকবর তখন বিবাহিত। করেইয়ার দাবি, প্রথম দেখাতেই বছর সতেরোর দোনা মারিয়ার প্রেমে পড়ে যান আকবর। এর পর ওই বোনের সঙ্গে দোনার ঠাঁই হয় সম্রাটের হারেমে। তবে এতেই নাকি চটে যান মুঘল ও পর্তুগিজ, ক্যাথলিক— সব পক্ষই। পর্তুগিজ-ক্যাথলিকদের অনেকেই যেমন মেনে নিতে পারেননি, আকবরের হারেমে তাঁদের কেউ রয়েছেন। অন্য দিকে, মুঘলরাও খ্রিস্ট ধর্মের কোনও বিদেশি মেয়েকে আকবরের স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে পারেননি। কারণ, শুরু থেকেই ব্রিটিশরা মুঘলদের শত্রু বলে গণ্য হত। করেইয়ার দাবি, সে সময় থেকে যোধাবাঈ নামে মিথের জন্ম। আর তা করেন ব্রিটিশ ও মুঘল— দুই পক্ষই। তাঁর দাবি, আকবর বা জাহাঙ্গিরের লেখনীতে যোধাবাঈয়ের কোনও উল্লেখ মেলেনি। বরং, ডোনা মারিয়াই তাঁর মা হলেও হতে পারেন। আর তাঁকে মারিয়াম আল-জামানি হিসাবে উল্লেখ করেছেন জাহাঙ্গির। গল্পকথায় সেই মারিয়াম আল-জামানিই হয়ে উঠেছেন জোধাবাঈ অথবা কখনও বা হরকাবাঈ।
আরও পড়ুন
সোমালিয়া উপকূলের কাছে জলদস্যুদের হাতে অপহৃত ইন্ডিয়ান অয়েলের জাহাজ
‘পর্তুগিজ ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য মুঘল রিলেশনস ১৫১০-১৭৩৫’ -এ জোধাবাঈয়েরঅস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন লেখক লুই দি আসিস করেইয়া। ছবি: সংগৃহীত।
মারিয়ামই যে জাহাঙ্গিরের মা, তা নিয়ে নিশ্চিত নন করেইয়া। বরং, ১৭৩ পাতার ওই বইয়ে করেইয়ার দাবি, মুঘল যুগের কোনও তথ্যাদিতে জাহাঙ্গিরের মা হিসাবে মারিয়ামের নাম মেলেনি।
নিজের দাবির সপক্ষে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিরিন মুসভির মতকেই তুলে ধরেছেন ৮১ বছরের করেইয়া। মুসভি বলেন, “আকবরনামা বা মুঘল যুগের কোনও নথিতে জোধাবাঈের কোনও উল্লেখ নেই। আকবর ভামলের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন বটে, তবে তাঁর নাম জোধাবাঈ নয়।”