নয়াদিল্লি রেল স্টেশনেই প্রতারণার শিকার তামিলনাড়ু থেকে আসা তরুণেরা। ফাইল ছবি।
কাজ ছিল প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ট্রেন গোনা। ভেবেছিলেন চাকরির প্রশিক্ষণ চলছে। কিন্তু টানা এক মাস নয়াদিল্লি রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ট্রেন গোনার পর তামিলনাড়ুর ২৮ জন যুবক জানতে পারলেন, প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাঁরা। রেলে চাকরি পেতে তাঁদের দেওয়া লক্ষ লক্ষ টাকা হজম করে উধাও প্রতারক।
রেলের চলমান টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) থেকে শুরু করে ট্রাফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং করণিক পদে চাকরির জন্য তামিলনাড়ুর ২৮ জনের প্রত্যেককে দিতে হয়েছিল ২ লক্ষ টাকা থেকে ২৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। টাকা দেওয়ার পরই তাঁদের চাকরি হয়ে গিয়েছে বলে জানানো হয়। সে জন্য প্রশিক্ষণ নিতে আসতে হবে দিল্লি।
প্রতারকের কথামতো তামিলনাড়ু থেকে ট্রেনে করে সবাই আসেন রাজধানী দিল্লিতে। সেখানে তাঁদের বলা হয়, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ট্রেন গুনতে হবে। এক মাস ধরে প্রতি দিন ৮ ঘণ্টা ধরে সেই কাজই করে যান যুবকেরা। পরে জানতে পারেন, পুরোটাই প্রতারণা! দিল্লি পুলিশের আর্থিক অপরাধ দমন শাখায় এই মর্মে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, জুন এবং জুলাই মাসে দিল্লি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হত যুবকদের। কাজ ছিল, সেই প্ল্যাটফর্মে কোন ট্রেন কখন ঢুকছে তার সময় নথিভুক্ত করা, ট্রেনে কতগুলো কামরা রয়েছে তা লিখে রাখা। চলমান টিকিট পরীক্ষক পদে যিনি চাকরি পেয়েছেন তাঁকেও এই কাজ করতে হত, আবার করণিকের পদে চাকরি পাওয়াদের জন্যও নির্দিষ্ট ছিল একই কাজ, ট্রেন গোনা।
প্রতারণার ব্যাপারটি প্রথম বুঝতে পারেন, রেলেরই প্রাক্তন কর্মী তথা ওই যুবকদের পরিচিত এম সুব্বুস্বামী। তিনি পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নামে পুলিশ। সুব্বুস্বামীর দাবি, চাকরি দেওয়ার নাম করে যুবকদের কাছ থেকে ইতিমধ্যেই ২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা তুলে ফেলেছেন প্রতারক।
প্রতারণার শিকার মাদুরাইয়ের বাসিন্দা এক যুবক বলছেন, ‘‘প্রত্যেক প্রার্থীকে ২ লক্ষ থেকে ২৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছিল। সেই টাকা আমরা তুলে দিয়েছিলাম সুব্বুস্বামীর হাতে। সুব্বুস্বামী আবার সেই টাকা তুলে দেন বিকাশ রানা নামে রেলেরই এক আধিকারিকের হাতে।’’ নিজেকে উত্তর রেলের ডেপুটি ডিরেক্টর হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন বিকাশ। প্রতারণার শিকার ওই ২৫ বছরের যুবক জানিয়েছেন, তামিলনাড়ু থেকে আসা ২৮ জনই ইঞ্জিনিয়ার।
এ ব্যাপারে চাকরিপ্রার্থীদেরকে সাবধানবাণী শুনিয়েছে রেল। রেলে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়া যায় না, এ কথা বার বার প্রচার করার পরেও এমন কাণ্ড কী করে ঘটল, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে প্রতারকদের পেতে রাখা এমন ফাঁদে কাউকে পা দিতে নিষেধ করা হয়েছে।