অভিজিৎ ঘোষ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ ভোটে অব্যাহত রইল বামেদের দাপট। ছাত্র সংসদের মূল চারটি পদের চারটিতেই জিতেছেন বাম ছাত্র মোর্চার প্রার্থীরা। তার মধ্যে রয়েছেন বাংলার ছেলে অভিজিৎ ঘোষও।
দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর গত শুক্রবার ভোট গ্রহণ হয়েছিল দিল্লির এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে। রবিবার ভোটগণনা হল। সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে গোড়া থেকেই এগিয়ে ছিলেন বাম ছাত্র মোর্চার প্রার্থীরা। তবে যুগ্ম সম্পাদক পদে সঙ্ঘের ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপির প্রার্থীর সঙ্গে বাম ছাত্র মোর্চার প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। শেষ পর্যন্ত এই পদেও জয়ী হয়েছেন বাম প্রার্থী।
দিল্লির এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলার মেয়ে ঐশী ঘোষ। এবার সহ-সভাপতি পদে জিতলেন শিলিগুড়ির ছেলে অভিজিৎ। আনন্দবাজার অনলাইনকে অভিজিৎ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি-সহ শিক্ষায় ‘গৈরিকীকরণ’-এর যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকার চলেছে, জেএনইউ ক্যাম্পাসকে যে ভাবে ‘ছোট নাগপুর’ বানানোর চেষ্টা হয়েছে, তার বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা।
জেএনইউ-তে বাম সংগঠনের ছাত্রদের উচ্ছ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।
অভিজিতের স্কুলের পড়াশোনা শিলিগুড়িতে। তারপর স্নাতক স্তরের পড়াশোনার জন্য তিনি ভর্তি হন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন মহাবিদ্যালয়ে। তাঁর বিষয় ছিল অর্থনীতি। স্নাতক হওয়ার পর উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজিৎ পাড়ি দেন দিল্লিতে। ২০২০ সালে স্নাতকোত্তরের জন্য ভর্তি হন জেএনইউতে। মাস্টার ডিগ্রি শেষ করে এখন তিনি পিএইচডি দ্বিতীয় বর্ষের গবেষক। অভিজিতের বাড়িতে রয়েছেন বাবা, মা, দাদা এবং এক ভাই। বাবা ছোট একটি ব্যবসা করেন। দাদা যুক্ত ইমারতি ব্যবসার সঙ্গে। আর ভাই পড়াশোনা করছেন।
কবে থেকে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ? অভিজিৎ বলেন, “২০২০ সালে জেএনইউয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমি এসএফআই-এর সঙ্গে যুক্ত হই। তখন থেকেই আমার ছাত্র রাজনীতি করা শুরু।” কিন্তু বাংলায় কেন ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেননি? অভিজিৎ বলেন, “নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন মহাবিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র সংসদ করার কোনও সুযোগ ছিল না। ফলে ছাত্র সংগঠনেও যুক্ত হওয়ার সুযোগ মেলেনি।” অভিজিৎ জানিয়েছেন, তাঁর বড় হওয়া বাম রাজনীতির পরিসরেই। তাঁর বাবা সিপিএমের পার্টি সদস্য। তবে অভিজিৎ এ-ও জানিয়েছেন, তিনি এখনও সিপিএমের পার্টি সদস্যপদ পাননি। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, গোটা দেশে যখন বাম রাজনীতি ক্রমশ ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়ছে, তখন আপনি কেন এই সংগঠনে যোগ দিলেন? জবাবে অভিজিৎ বলেন, “মতাদর্শের কারণেই রাজনীতি করি। বাজার দেখে করি না।”
বর্তমান সিপিএমের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রাক্তনী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম সীতারাম ইয়েচুরি এবং প্রকাশ কারাট। আবার এ-ও ঠিক, লাল ইটের ক্যাম্পাসে অনেক বাম ছাত্রনেতাই রাজনীতি থেকে হারিয়ে গিয়েছেন। আবার কেউ কেউ শিবির বদল করেছেন। তাঁর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ কানহাইয়া কুমার, যিনি ছিলেন জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সভাপতি এবং এআইএসএফ নেতা। কিন্তু এখন তিনি দল (সিপিআই) বদলে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র।
ফল ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, সভাপতি পদে বাম ছাত্র মোর্চার প্রার্থী ধনঞ্জয় জিতেছেন ৯২২টি ভোটে। তাঁর প্রাপ্য ভোট ২৫৯৮। এবিভিপির প্রার্থী উমেশ চন্দ্র আজমিরা পেয়েছেন ১৬৭৬টি ভোট। সহ-সভাপতি পদে বাম ছাত্র মোর্চার প্রার্থী অভিজিৎ ঘোষ ৯২৭ ভোটে জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ২৪০৯টি ভোট। তাঁর বিরুদ্ধে এবিভিপির দীপিকা শর্মা পেয়েছেন ১৪৮২টি ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদের ভোটে বাম সমর্থিত প্রার্থী প্রিয়ংশী আর্য ৯২৬ ভোটে জিতেছেন। তিনি পেয়েছেন ২৮৮৭টি ভোট তাঁর বিরোধী প্রার্থী এবিভিপির অর্জুন আনন্দ পেয়েছেন ১৯৬১টি ভোট। যুগ্ম সম্পাদক পদে বাম সমর্থিত প্রার্থী মহম্মদ সাজিদ পেয়েছেন ২৫৭৪টি ভোট। তাঁর বিরুদ্ধে এবিভিপির প্রার্থী গোবিন্দ ডাঙ্গি পেয়েছেন ২০৬৬টি ভোট। সাজিদ জয় পেয়েছেন ৫০৮ ভোটে।