আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা চাপে ফি বৃদ্ধি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পিছু হটল।—ছবি পিটিআই।
ফি বৃদ্ধি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আংশিক ভাবে পিছু হটলেও এখনই ক্লাসে ফিরতে নারাজ জেএনইউয়ের আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। ছাত্র সংগঠনগুলির দাবি, ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুরোপুরি প্রত্যাহার না-হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।
সুরাহা হিসেবে দারিদ্র সীমার নীচে থাকা পড়ুয়াদের জন্য ফি বৃদ্ধি কার্যত অর্ধেক করার কথা বলা হলেও, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। ইউনিয়নের দাবি, কোন মাপকাঠিতে তা ঠিক হবে, তা স্পষ্ট নয়। নতুন করে কি তা ঠিক করবে বিশ্ববিদ্যালয়ই?
হস্টেলে থাকা-খাওয়ার খরচ এক লাফে বহু গুণ বাড়ানোর নোটিসের প্রতিবাদে দু’সপ্তাহেরও বেশি বিক্ষোভে উত্তাল এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। আজও প্রতিবাদে ইউজিসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। টানা প্রতিবাদে শামিল এসএফআই-ও। এই পরিস্থিতিতে এ দিন এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকের পরে এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, পড়ুয়াদের দাবির কথা মাথায় রেখে দারিদ্র সীমার নীচে থাকা ছাত্রছাত্রীদের বর্ধিত ফি-এর থেকে অনেকটাই রেহাই দেবে তারা। যেমন, একার ঘরের ভাড়া মাসে ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ করা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি কম থাকা পড়ুয়াদের দিতে হবে ৩০০ টাকা। একই ভাবে দু’জনের ঘরের ভাড়া থেকে শুরু করে জল-বিদ্যুতের খরচ, বিভিন্ন মেস পরিষেবার খরচ ইত্যাদিতেও প্রস্তাবিত ফি-এর অর্ধেক টাকা দেওয়ার সুবিধা পাবেন দারিদ্র সীমার নীচে থাকা পড়ুয়ারা। ‘সিকিওরিটি মানি’ ৫,৫০০ টাকাই থাকবে। বাড়ানো হবে না।
কিন্তু এসএফআইয়ের দাবি, ফি বৃদ্ধি প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত লোকদেখানো। কারণ, প্রথমত তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্তদের ওই সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়নি। আর দ্বিতীয়ত, অনেক ক্ষেত্রে অর্ধেক ছাড়ের কথা বলা হলেও নির্দিষ্ট টাকা বেঁধে দেওয়া হয়নি। তাদের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে আগামী দিনে বছরে ১০% করে ফি বৃদ্ধির রাস্তা কৌশলে খুলে রাখা হয়েছে। তাই বর্ধিত ফি পুরো প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চলবে বলে জানিয়েছে তারা।
আংশিক ফি বৃদ্ধি প্রত্যাহারে খুশি নয় এবিভিপি-ও। তাদের মতে, দারিদ্র সীমার সংজ্ঞা স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া, ভাঁড়ারে টান পড়ার কারণেই ফি বৃদ্ধি ছাড়া গতি নেই বলে দাবি করেছিলেন উপাচার্য। কিন্তু ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করলেই বকেয়া ৬.৭ কোটি টাকা দেবে তারা। এখন সেই লক্ষ্যেই উপাচার্যের উপরে চাপ বাড়ানো হবে বলে এবিভিপির দাবি।
এ দিন বিক্ষোভে শামিল সন্তু মাইতি, মনদীপ কুমার, রাজীব কুমার, সুমন্ত সাহুরা বলছিলেন, জেএনইউ-ই সম্ভবত দেশের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা গুণমানে ভাল হওয়া সত্ত্বেও এত কম খরচে পড়তে পারেন পড়ুয়ারা। এখানে অনেকেই আসেন গরিব পরিবার থেকে। কম খরচে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হন জীবনে। ফি বাড়লে, সেই সুযোগ আর তাঁরা পাবেন না। যে ভাবে শুধু দারিদ্র সীমার নীচে থাকা পড়ুয়াদের সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা-ও খুশি করেনি তাঁদের। বরং প্রশ্ন, যদি কারও পারিবারিক আয় ওই সীমার সামান্য উপরে হয়, তার মানেই কি তিনি সচ্ছল? সরকার যদি সর্দার পটেলের মূর্তি গড়তে বিপুল টাকা ব্যয় করতে পারে, শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়াতে এত কার্পণ্য কীসের?
অনেকে বললেন, অবিশ্বাসের আবহ তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়াদের মধ্যে। আজ কর্তৃপক্ষ জানান, বিক্ষোভরত পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের একাংশের বাধায় ক্যাম্পাসের বাইরে এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠক করতে হয়েছে। পড়ুয়াদের পাল্টা প্রশ্ন, নামী হোটেলে বৈঠকের টাকা থাকলে ফি বাড়ানো কেন? পোশাক বা রাতে হস্টেলে ফেরার সময় নিয়ে কড়াকড়ি বন্ধেও স্পষ্ট লিখিত নির্দেশ চান ছাত্র-ছাত্রীরা।