অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন।
এক রাতেই যেন বদলে গিয়েছে চার পাশ! ছাত্রাবস্থা থেকে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, সেই জেএনইউ বা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিরতেই এখন ভয় পাচ্ছেন অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন। সংবাদ সংস্থার খবর, রবিবার সন্ধ্যায় মুখোশধারী গুন্ডাদের হামলায় আহত ভূগোলের অধ্যাপিকা সুচরিতাদেবী সোমবার রাতেও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
পড়ুয়া হিসেবে জেএনইউয়ে প্রথম পদার্পণ। সেখানেই শিক্ষকতা করছেন গত প্রায় দু’দশক ধরে। নানান উথালপাতাল আন্দোলন দেখেছেন তিনি। কিন্তু মুখ ঢেকে বহিরাগতেরা ছাত্রীদের হস্টেলে তাণ্ডব চালাচ্ছে, শিক্ষকদের পেটাচ্ছে— এমন দৃশ্য আগে দেখেননি সুচরিতাদেবী। তিনি জানান, মুখোশধারীরা লাঠি, হকি স্টিক নিয়ে এসেছিল। এলোপাথাড়ি ইট ছুড়ছিল। তাঁর কাঁধে একটি ইট এসে লাগে। তার পরে আধলা ইট মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে ক্যাম্পাসের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং পরে এমসে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।
অর্থনৈতিক ভূগোল এবং মূলত গ্রামীণ জনজীবন বিশেষজ্ঞ সুচরিতাদেবীর স্কুলজীবন কেটেছে কলকাতার পাঠভবনে। এই ঘটনায় তাঁর সহপাঠীরাও উদ্বিগ্ন। অনেকে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগও করছেন আক্রান্ত বন্ধুর সঙ্গে। পাঠভবনে সুচরিতাদেবীর সহপাঠী বিশ্বনাথ দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘পাঠভবন থেকেই মুক্তচিন্তার প্রথম পাঠ পেয়েছি আমরা। রবিবার জেএনইউয়ে যে-দৃশ্য দেখলাম, তা আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়। সুচরিতারা কী ভাবে সেখানে শিক্ষকতা করছে, তা ভেবেই ভয় লাগছে।’’ তিনি জানান, সুচরিতাদেবী ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। অন্যদের তুলনায় একটু চুপচাপ থাকলেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। এবং অবশ্যই মুক্তচিন্তায় অভ্যস্ত।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সুচরিতাদেবীর উপরে আক্রমণের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন মানুষজন। রয়েছেন তাঁর প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরাও। সুচরিতাদেবী এবং জেএনইউয়ের পড়ুয়াদের উপরে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন এ দিন বিবৃতি দিয়েছে। এই আক্রমণকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ আখ্যা দিয়ে ওই শিক্ষক সংগঠন বলেছে, যুক্তিবাদী, চিন্তাবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষক, পড়ুয়াদের উপরে হামলা দেশের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষের পরিবেশকে উস্কে দিচ্ছে। এই ঘটনায় দোষীদের অবিলম্বে শাস্তি দাবি করেছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।