বন্দুক উঁচিয়ে ট্রিগার টেপাই সার। গান স্যালুটে গুলিই বেরোলো না বিকল বন্দুক থেকে। শুক্রবার রাঁচিতে ছবিটি তুলেছেন হেমন্ত কুমার।
কেউ বন্দুক ধরে মাটিতে ঠুকছেন। কেউ দাঁতে দাঁত চেপে বন্দুকের ট্রিগার টানার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কেউ নিজের বন্দুকটি কোনও ভাবে কাঁধে ঝুলিয়ে এগিয়ে এসেছেন সহকর্মীর ‘অচল’ বন্দুকটি ‘সচল’ করার জন্য। কিন্তু বন্দুক আর চলে না!
আজ সকাল ন’টা। ঘটনাস্থল রাঁচির রাতু রাজবাড়ি। গত কালই প্রয়াত হয়েছেন রাতুর ‘মহারাজা’ লাল চিন্তামনি শরননাথ সহদেব। অন্ত্যেষ্টির জন্য আজ তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে বারাণসী। কিন্তু তার আগে, সকালে প্রয়াত মহারাজাকে গান স্যালুটের মাধ্যমে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করে ঝাড়খণ্ড সরকার। মুখ্যসচিব-সহ উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা, রাজ পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সামনে শুরু হয় গান স্যালুট। আর শুরুতেই বিপত্তি!
রাজবাড়ি চত্বরে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে শুইয়ে রেখে দেওয়া মহারাজার দেহ। কম্যান্ডারের নির্দেশ পেয়ে গান স্যালুট দিতে ষোল জন পুলিশ কর্মী কাঁধে বন্দুক তুলে নিয়েছেন। কম্যান্ডার নির্দেশ দিলেন, ‘প্রেস কর’। কিন্তু বন্দুক আর চলে না। ঘটনা দেখে মুখ গম্ভীর মুখ্যসচিব সজল চক্রবর্তীর। মুখ টিপে হাসছেন উপস্থিত লোকজন। অস্বস্তিকর মুখে দাঁড়িয়ে সরকারি কর্তা আর পুলিশ কর্তারা। ফিসফিসানি শুরু হয়েছে রাজ্য পুলিশের পরিকাঠামো নিয়ে। কোম্পানি কম্যান্ডারের নির্দেশে যাঁদের বন্দুক চলছে না তাঁদের সাহায্য করতে অন্যরা এগিয়ে এলেন। গান স্যালুটের লাইন গেল ভেঙে। কেউ বন্দুক নিয়ে মাটিতে ঠুকতে শুরু করলেন। অতি কষ্টে এক আধটা বন্দুক থেকে গুলি বেরলো বটে, কিন্তু সিংহভাগ বন্দুকই কাজ করল না। ষোল জন পুলিশ জওয়ানের তিন বারে মোট আটচল্লিশটি গুলি শূন্যে চালানোর কথা ছিল। কিন্তু ‘ফায়ার’ হল মাত্র পাঁচটি গুলিই। সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে জবাবদিহি চেয়েছেন। রাঁচি কিংবা জেলার বিভিন্ন থানায় কনস্টেবলদের হাতে এমন থ্রি-নট-থ্রি রাইফেলই দেখা যায়। কোনও বড় গোলমালের ঘটনায় থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল নিয়েই পুলিশ কনস্টেবলরা ঘটনাস্থলে যান। প্রশ্ন উঠেছে, বন্দুকের এই হাল হলে পুলিশ সাধারণ মানুষের এবং নিজেদের নিরাপত্তা দেবে কী ভাবে? পরিস্থিতি ধামাচাপা দিতে রাঁচির পুলিশ সুপার (সদর) অনুপ বিথরে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, “নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা তেমন কোনও বড় ঘটনা নয়। জঙ্গলে মাওবাদীদের সঙ্গে পুলিশ এই ধরনের বন্দুক নিয়ে লড়ে না। এ সব বন্দুক পুলিশের প্রশিক্ষণ আর ‘সেরিমনিয়াল ফাংশনেই’ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া রাজ্যে এই বন্দুকের ব্যবহার হয় না।” আর আজকের ঘটনা সম্পর্কে বিথরের ব্যাখ্যা, “আমরা সমস্ত বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এই সব অনুষ্ঠানে যে ধরনের গুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলি বহু দিন ধরে পড়ে থাকে। হয়তো গুলি খারাপ ছিল। আবার হতে পারে, রাইফেলগুলি বহুদিন সংস্কার করা হয়নি। কী হয়েছে তা দেখা হচ্ছে।”