ভোটের প্রস্তুতি। ভোট যন্ত্র বাছাই চলছে ধানবাদে। মঙ্গলবার চন্দন পালের তোলা ছবি।
লোকসভা নির্বাচনের সময় তিনি ছিলেন একা। এ বার তাঁরা দু’জন, মোদীর সঙ্গে অমিত শাহ।
ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে দলের হয়ে প্রচারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু খবর সেটা নয়, দলের প্রধানমন্ত্রী তো দু’চারটে সভা করবেনই। কিন্তু ৮১ আসনের ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দশটিরও বেশি সভা! রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, এরই পাশাপাশি থাকছে দল সভাপতির অমিত শাহের ৩০টি জনসভা!
বিজেপি-র এই ‘অল আউট’ লড়াইয়ের পাশে কংগ্রেস শিবির নিতান্তই মনমরা। রাহুল-সনিয়ার সভার জন্য রাজ্য নেতৃত্ব সময় চেয়েছেন। এখনও কোনও উত্তর নেই। কংগ্রেস নেতা সুবোধকান্ত সহায়ের ধারণা, ভোট আর একটু গড়ালে শেষ পর্যায়ে আসবেন সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী। অন্য দিকে, রাজ্য নির্বাচনে বিজেপি-র মূল প্রতিপক্ষ ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) প্রধান ভরসা দিসম্ গুরু তথা দল প্রধান শিবু সোরেন। অসুস্থ শিবু সোরেনকে রাজ্যের অন্তত একশোটি সভায় হাজির করানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁর পুত্র তথা মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত। কারণ এখনও আদিবাসীদের মধ্যে ‘গুরুজি’-র প্রভূত প্রভাব। মহারাষ্ট্র আর হরিয়ানা জয়ের পর মোদী-শাহ জুটির লক্ষ্য ঝাড়খণ্ড। রাজ্যের বিজেপি নেতারা মনে করেন, এ রাজ্যে প্রথম বার স্থায়ী সরকার তৈরি করতে হলে দরকার সেই মোদীর মুখই। সঙ্গে সেনাপতি শাহ। যে কারণে রাঁচি কিংবা জামশেদপুরের মতো শহুরে এলাকা হোক অথবা জেলার কোনও প্রান্তিক অঞ্চল---সর্বত্রই বিজেপি প্রার্থীর চেয়ে নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহের ছবি দেওয়া হোর্ডিংই বেশি। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র প্রদীপ সিন্হার কথায়, “প্রথম দফার নির্বাচনের আগে মোদীজির সময় পাওয়া যাবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় ছিল। তবে আজকের খবর, প্রথম দফার নির্বাচনের আগেই মোদীজি ঝাড়খন্ডে আসছেন। আগামী ২১ তারিখ লাতেহার ও পলামুপ্রধানমন্ত্রীর দু’টি সভা হবে।” আর প্রথম দফার নির্বাচনী প্রচারে রবিবারই ঝাড়খন্ডে এসে গিয়েছেন অমিত শাহ। সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রচারের জন্য রাজ্যের ‘কোণে কোণে’ যেতে হবে প্রার্থীদের। আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গা নেই। তথ্য-প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা সমেত চল্লিশটি প্রচার-গাড়ি তৈরি করা হয়েছে। গাড়িগুলি প্রার্থীদের দেওয়া হচ্ছে ব্যবহারের জন্য। প্রচারের সময়ও প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে রাঁচির হরমুতে প্রদেশ বিজেপি দফতরে আলাদা করে কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। ‘ফেসবুক’ কিংবা ‘হোয়াটস অ্যাপ’-এর ব্যবহারে রীতিমতো প্রযুক্তিবিদদের এনে বসানো হয়েছে কন্ট্রোল রুমে। আর ভিভিআইপি প্রচারে হেলিকপ্টারের ব্যবহার, বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, সে আর বলার কী আছে!
বিজেপির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই প্রচারের লড়াইয়ে নেমে পড়েছে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না হওয়ায় রাহুল গাঁধী, সনিয়া গাঁধীর মতো নেতৃদের এ বার প্রচারে পাচ্ছে না জেএমএম। যে কারণে পরিকল্পনা করা হয়েছে দলের শীর্ষনেতা শিবু সোরেনকে দিয়ে অন্তত একশোটি সভা করানোর। দলের মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “আমরাও প্রচারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করছি। একই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারও করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পথ-নাটক, লোক গানের মাধ্যমেও প্রচার চলবে।”
আপাতত, কংগ্রেস ‘স্টার বক্তা’ হিসেবে পেয়েছে জোটসঙ্গী আরজেডির শীর্ষনেতা, লালুপ্রসাদকে। গত কালই পলামুয়ে তিনটি সভা করেছেন লালুপ্রসাদ। বিজেপি-বিরোধী প্রাক্-নির্বাচনী জোট না হওয়ায় প্রতিটি সভাতেই লালুকে সাফাই দিতে হচ্ছে। তিনি বলছেন, “আগে হয়নি তো কী হয়েছে, পরে হবে।” ভোটের পর জেএমএম-কে নিয়ে জোট-সরকার করবেন তাঁরা। প্রচারে আসতে পারেন নীতিশ কুমারও। কারণ এ বার আরজেডি আর জেডিইউ এর সঙ্গে কংগ্রেস জোট বেঁধেছে। তবে কতগুলি আসনে সেই জোট তা আজ পর্যন্ত নির্দিষ্ট হয়নি। আরজেডির তরফ থেকে মনোজ পাণ্ডে দাবি করেন, তাঁরা আঠারোটি আসনে লড়ছেন। আর সেই দাবি খারিজ করে কংগ্রেস নেতা সুবোধকান্তের বক্তব্য, আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়নি।