বিমানের মধ্যে অক্সিজেন মাস্ক নিয়ে আতঙ্কিত যাত্রীরা। —ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি
১৬৬ জন যাত্রীর নিয়ে আকাশে উড়ছে বিমান। বিন্দুমাত্র ভুলত্রুটিতেও যেখানে ভয়ঙ্কর বিপদ হতে পারে, সেখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুইচ অন করতেই ভুলে গেলেন কেবিন ক্রু। মাঝ আকাশে বায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকল না। ফলে অন্তত ৩০ জন যাত্রীর নাক-কান দিয়ে রক্ত ঝরল। মাথাব্যথায় ছটফট করলেন অনেকে। কারও কারও শ্বাসকষ্টও শুরু হয়েছিল। প্রাণ সংশয়ও হতে পারত, যদি না ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মুম্বই বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করত জেট এয়ারওয়েজের যাত্রীবাহী বিমান। ওই বিমান কর্মীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)।
জেট এয়ারওয়েজের ৯ডব্লিউ ৬৯৭ উড়ান মুম্বই বিমানবন্দর থেকে জয়পুরের উদ্দেশে টেক অফ করে বৃহস্পতিবার সকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে। কিন্তু ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রীদের মধ্যে শুরু হয় প্রচণ্ড কোলাহল। কানে ও নাকে প্রচণ্ড চাপ পড়তে শুরু করে। নাক ও কান দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু অনেকের। যাত্রীদের অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া হয়। তখনই পাইলটরা বুঝতে পারেন, বিমানের ভিতরে এয়ার প্রেশার বা বায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রণের সুইচটিই অন করা হয়নি। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে যোগাযোগ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফের মুম্বই বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে বিমানটি। যাত্রীদের নামিয়ে সকলকে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয় বিমানবন্দরেই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অন্তত ৩০ জনের নাক বা কান দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। অনেকেই মাথাব্যথায় ছটফট করছিলেন।
ওই বিমানের এক যাত্রী ওই সময়ের একটি ভিডিয়ো তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, সব যাত্রীই অক্সিজেন মাস্ক পরে রয়েছেন। সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন অনেকেই।
ডিজিসিএ জানিয়েছে, এয়ারক্র্যাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, দায়িত্বে থাকা কেবিন ক্রু ওই সুইচটি অন করতেই ভুলে গিয়েছেন। ফলে বিমানের ভিতরের বায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তাতেই রক্তপাত ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়েছে যাত্রীদের।
আরও পডু়ন: চার রাজ্যে ভোটের টানেই কি তিন তালাকে এত তাড়া মোদী সরকারের?
জেট এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য বিষয়টিকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। সংস্থার এক মুখপাত্র জানান, বোয়িং ৭৩৭ গোত্রের বিমানটি নিরাপদেই অবতরণ করে। কয়েক জন যাত্রীর কানে ব্যথা, নাকে রক্তপাত হওয়ায় তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। যাত্রীদের জন্য বিকল্প উড়ানের বন্দোবস্তও করেছে সংস্থা। কিন্তু গুরুতর এই অপরাধের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা হবে, সে বিষয়ে কিছুই জানায়নি সংস্থা।
আরও পডু়ন: প্রেমে প্রত্যাখ্যান, রিয়্যালিটি শোয়ের নৃত্যশিল্পীর উপর অ্যাসিড হামলা
অসামরিক বিমান বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যে উচ্চতায় বিমান চলাচল করে, তাতে কেবিনের ভিতরে বায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকা ভয়ঙ্কর জরুরি অবস্থার শামিল। ভিতরের বায়ুর চাপ কমে গেলে ফুসফুসের টিসুতে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। তার জেরে সারা শরীরে রক্তপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটে। শ্বাসকষ্ট, নাক ও কান দিয়ে রক্তপাতের মতো সমস্যা হতে পারে। আর বেশিক্ষণ চললে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
(রাজনীতি, অর্থনীতি, ক্রাইম - দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)