—ফাইল চিত্র।
কংগ্রেসের জন্যই বিরোধী জোট ছাড়তে হয়েছে নীতীশ কুমারকে, ব্যাখ্যা দিল তাঁর দল জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ভিতরে কংগ্রেসের ‘ষড়যন্ত্র’-এর শিকার হতে হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। যদিও এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের এক প্রথম সারির এক নেতার বক্তব্য, মমতা আর নীতীশকে মেলানো যাবে না কোনও ভাবেই। তিনি বরাবর বিজেপি বিরোধী ছিলেন, আছেন এবং ভবিষ্যতেও তা-ই থাকবেন।
রবিবার দুপুরেই বিহারে কংগ্রেস, আরজেডি এবং জেডিইউয়ের মহাগঠবন্ধন সরকারের মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন নীতীশ। তার পরেই নীতীশের জোটবদলের জল্পনা প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দেন তাঁর দলের নেতা এস কে ত্যাগী। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই ‘ইন্ডিয়া’র নেতৃত্বের দখল নিতে চেয়েছে কংগ্রেস। এ ব্যাপারে তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে পড়েছিল যে, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসাবে ষড়যন্ত্র করে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম বলিয়ে নেয় তারা। আর সেই কাজ কংগ্রেস করিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে।’’
জেডিইউয়ের ব্যাখ্যা, ‘ইন্ডিয়া’র প্রথম বৈঠক থেকেই সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল, তারা কোনও প্রধানমন্ত্রীর মুখ সামনে না রেখেই লোকসভায় জোটবদ্ধ হয়ে লড়বে। তার পরও কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসাবে নিজেদের দলের নেতার নাম বলিয়ে নেয়। এমনকি, আসন রফা নিয়ে জেডিইউ এবং অন্য আঞ্চলিক দলগুলি বার বার আলোচনা করতে চাইলেও বিষয়টি ক্রমাগত এড়িয়ে যাচ্ছিল কংগ্রেস। স্পষ্ট না বললেও ত্যাগী বুঝিয়ে দিয়েছেন ‘ইন্ডিয়া’র ভিতরে কংগ্রেসের ‘দাদাগিরি’ মানতে না পেরেই জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাঁদের। ঘটনাচক্রে, সেই একই অভিযোগ এর আগে করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতাও।
মমতা সম্প্রতিই ঘোষণা করেছেন, লোকসভা ভোটে বাংলায় একাই সবক’টি আসনে লড়বে তাঁর দল তৃণমূল। মমতা এ-ও বলেন যে, আসন নিয়ে আলোচনা বার বার এড়িয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। ঘটনাচক্রে, মমতার ওই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রকাশ্যে আসে বিহারে রাজনৈতিক বদলের আভাস। জল্পনা শুরু হয় বিহারের জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে আবার এনডিএ-তে যাওয়া নিয়ে। তার পরেই প্রকাশ্যে আসে জেডিইউ নেতা এস কে ত্যাগীর ব্যাখ্যা। তবে কি নিজেদের জোট ছাড়ার সিদ্ধান্তকে মমতার ‘একলা চলো’র সিদ্ধান্তের সঙ্গে জুড়তে চাইছে জেডিইউ?
মমতা ‘ইন্ডিয়া’কে ছেড়ে বাংলায় লড়ার কথা বললেও ‘ইন্ডিয়া’ ছাড়ার কথা বলেননি এখনও। রবিবার অবশ্য তৃণমূল জানিয়েছে, তারা নীতীশ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাবে না। যত ক্ষণ না নীতীশ বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিচ্ছেন, তত ক্ষণ বাংলার শাসকদল নীরব থাকবে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই কালীঘাটের নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে সব মুখপাত্রের কাছে। তবে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ‘‘নীতীশকে শুধু বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হতে দিন। তার পর ওর মুখোশ খুলে দেব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।’’
অর্থাৎ, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দু’জনেই কথা বললেও মমতা এবং নীতীশের অবস্থান ভিন্ন। সেটাই বলতে চেয়েছেন তৃণমূলের ওই নেতা। প্রসঙ্গত, শুক্রবারই, তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছিল, মমতা তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে নীতীশ প্রসঙ্গে বলেছেন, নীতীশ চলে গেলে ইন্ডিয়ার পক্ষে ভাল হবে। কারণ, নীতীশ বিহারের জনতার চোখে অপ্রিয় হয়ে পড়েছেন। একসঙ্গে লড়লে বিহারে ৫-৭টির বেশি আসন পাওয়া যেত না। ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে আরজেডির নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বী যাদবদের কাজ করতে সুবিধা হবে।