এইচ ডি দেবগৌড়া। —নিজস্ব চিত্র।
সেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় থেকে তাঁর সঙ্গে আপাত ভাবে ভাল সম্পর্ক বামেদের। অবস্থান বদল করতে গিয়ে সেই এইচ ডি দেবগৌড়াই চরম বিবাদে জড়িয়ে পড়লেন সিপিএমের সঙ্গে! তাঁর নিজের দলের মধ্যেও তার অভিঘাত এতটাই যে, দেবগৌড়াদের সিদ্ধান্তের উল্টো পথে গিয়ে কেরলে সিপিএমের সঙ্গেই রাজনৈতিক জোট ও মন্ত্রিসভায় থাকার অবস্থান নিল জেডিএস।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে রোখার লক্ষ্যে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠন করেছে বিরোধীরা। সেই সময়েই দেবগৌড়া ও তাঁর ছেলে এইচ ডি কুমারস্বামী ঘোষণা করেছেন, কর্নাটকে তাঁরা বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে লড়বেন। পাশের কেরলেই সিপিএমের নেতৃত্বাধীন ফ্রন্ট এলডিএফের শরিক জেডিএস, মন্ত্রিসভাতেও তাদের প্রতিনিধিত্ব আছে। এর মধ্যে দেবগৌড়া আরও বিপত্তি বাধিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়নের নাম টেনে এনে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দাবি, বিজেপির সঙ্গে জেডিএসের সমঝোতায় বিজয়নের ‘সম্মতি’ আছে! সিপিএমের প্রবল প্রতিবাদের মুখে তিনি অবশ্য আবার ভোল বদল করেছেন। কিন্তু কেরলের জেডিএস নেতৃত্ব পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দেবগৌড়ার জোট পদক্ষেপ বা বক্তব্য— কোনওটার সঙ্গেই তাঁরা একমত নন। প্রয়োজনে দেবগৌড়াদের ছেড়ে বেরিয়ে আসতেও তৎপর জেডিএসের বাকি অংশ। বিদ্রোহের পথে যাওয়ায় কর্নাটকের দলীয় সভাপতি সি এম ইব্রাহিমকে ইতিমধ্যে বহিষ্কারও করছেন দেবগৌড়া।
বিজেপির সঙ্গে তাঁদের জোট করা নিয়ে হইচই শুরু হতে দেবগৌড়া বলে বসেছিলেন, এই বিষয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন পুরোপুরি অবহিত এবং তাঁর ‘সম্মতি’ও আছে! প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ওই দাবি প্রায় লুফে নিয়ে কেরলের কংগ্রেস নেতারা বলতে শুরু করেন, ইডি-সহ কেন্দ্রীয় সংস্থার হাত থেকে বাঁচতে বিজয়নেরা জেডিএস-কে বিজেপির সঙ্গে সেতু হিসেবে ব্যবহার করছেন। বিজয়ন অবশ্য বলেছেন, ‘‘সিপিএম কোনও সময়ে কোনও ভাবেই জেডিএসের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা গলায়নি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমাকেও জেডিএসের দলীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। কারও অর্থহীন কথার দায় তো আমাদের উপরে চাপানো চলে না!’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘যে দলের নাম জনতা দল সেকুলার, তারা কী ভাবে বিজেপির সঙ্গে জোট করে— সেই প্রশ্নটাই প্রথমে সকলকে ভাবাবে! বিজেপির ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান বরাবর পরিষ্কার। বয়স হয়ে যাওয়ায় দেবগৌড়া বুঝতেই পারছেন না জেডিএসের মধ্যেই কী হচ্ছে!’’ ছেলের জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আগেও জেডিএস-কে বিজেপির দিকে নিয়ে গিয়েছেন বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
ইয়েচুরি, বিজয়নদের সুরেই জেডিএসের কেরল রাজ্য সভাপতি ম্যাথিউ টমাসের বক্তব্য, ‘‘এই রকম কথায় (দেবগৌড়ার) বিস্তর বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। হয় কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, নয়তো বয়সজনিত কারণে ওঁর গোলমাল হয়েছে। কেরলে আমরা বামেদের সঙ্গেই আছি।’’ দেবগৌড়া অবশ্য পরে আবার দাবি করেছেন, বিজয়ন বা সিপিএমের সম্মতি ছিল, এমন কথা তিনি বলতে চাননি। তবে তত ক্ষণে গোলমাল যা হওয়ার, হয়ে গিয়েছে!