দীপা জয়াকুমার ও পিএইচ পান্ডিয়ন— একই দিনে জোড়া ধাক্কা শশিকলার জন্য। —ফাইল চিত্র।
বিস্ফোরক অভিযোগ শশিকলার বিরুদ্ধে। আর সেই সঙ্গেই জয়ললিতার দলে বিদ্রোহ এ বার প্রকাশ্যে। পোয়েস গার্ডেনের বাড়িতেই জয়ললিতাকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল এবং যখন জয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন তাঁর শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট খারাপ— মঙ্গলবার এমনই মন্তব্য করেছেন এআইএডিএমকে-র প্রবীণ নেতা তথা তামিলনাড়ু বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার পিএইচ পান্ডিয়ন। শশিকলার ভূমিকা তদন্ত করে দেখা হোক, দাবি পান্ডিয়নের। একই দিনে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে শশিকলার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন জয়ার ভাইঝি দীপা জয়াকুমারও। পিসির মৃত্যু ‘অস্বাভাবিক’, মন্তব্য ভাইঝিরও। শশিকলাকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখনজক’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
পিএইচ পাণ্ডিয়ন এ দিন বলেছেন, ‘‘২২ সেপ্টেম্বর থেকে আমি চুপচাপই ছিলাম। কিন্তু গত দু’দিন ধরে যা কিছু ঘটেছে, তাতে আমি নীরবতা ভাঙতে বাধ্য হলাম। আমি জানতে পেরেছি, জয়া বিষণ্ণ ছিলেন এবং পোয়েস গার্ডেনে কারও সঙ্গে তাঁর কথা কাটাকাটি হয়েছিল। সে সময় তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়, তাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।’’ পান্ডিয়নের ইঙ্গিত, যিনি জয়ললিতাকে ধাক্কা দিয়েছিলেন, জয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা তাঁর ছিল না। তিনি বলেছেন, ‘‘সন্দেহ এড়ানোর জন্যই জয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ শশিকলার ভূমিকা ঠিক কী ছিল, তা তদন্ত করে দেখা হোক, দাবি এআইএডিএমকে বিধায়ক পান্ডিয়নের।
বিস্ফোরক অভিযোগ এনে শশিকলার ভূমিকা খতিয়ে দেখার দাবি তুললেন এআইএডিএমকে-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পিএইচ পান্ডিয়ন। সঙ্গে পুত্র মনোজ পান্ডিয়ন। ছবি: পিটিআই।
এআইএডিএমকে তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে পান্ডিয়নের এই মন্তব্যকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেছে। দলের মুখপাত্রেরা বলেছেন, ‘‘জয়ললিতার মৃত্যুতে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। পিএইচ পান্ডিয়ন দলের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তিনি ডিএমকে-র হয়ে কাজ করছেন।’’
পান্ডিয়নের বিদ্রোহকে নস্যাৎ করেই কিন্তু শেষ হয়নি এআইএডিএমকে তথা শশিকলার অস্বস্তি। জয়ললিতার ভাইঝি দীপা জয়াকুমারও আজ ফের মুখ খুলেছেন। তিনি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে অভিযোগ তুলেছেন, জয়ললিতার মৃত্যু কোনও স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। দীপা বলেছেন, ‘‘প্রথম দিন থেকে আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছিলাম, আমাকে ভিতরে যেতে দেওয়া হোক। কিন্তু তাঁরা আমাকে কিছুতেই ভিতরে যেতে দেননি। আমার সঙ্গে কোনও যোগাযোগও রাখেননি।’’ জয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সব তথ্য অ্যাপোলোকে প্রকাশ করতে হবে, দাবি তুলেছেন জয়ার ভাইঝি। সোমবার অ্যাপোলো হাসপাতালের ডাক্তাররা সাংবাদিক বৈঠক করে জয়ার চিকিৎসা এবং মৃত্যু সম্পর্কে যে সব তথ্য দিয়েছেন, তা যথেষ্ট নয় বলে দীপা জয়াকুমার মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি। ... সাংবাদিক বৈঠকটি সাজানো ছিল। ... আরও আগেই এই সাংবাদিক বৈঠক হতে পারত।’’ দীপা জয়াকুমারের ইঙ্গিত, শশিকলাকে ঘিরে যে সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তার থেকে মুক্তি পেতেই চিকিৎসকদের দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: অপসারিত একের পর এক আমলা, বাড়ছে ক্ষোভ, তবু এগোচ্ছে শপথের প্রস্তুতি
শশিকলাকে মুখ্যমন্ত্রী করার যে সিদ্ধান্ত এআইএডিএমকে নিয়েছে, তার তীব্র বিরোধিতা করেছেন দীপা। তাঁর বক্তব্য, কারও সঙ্গে (জয়ার সঙ্গে) ৩৩ বছর থেকেছেন বলে এক জন (শশিকলা) মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন, এ কথার কোনও যুক্তি নেই। জয়ার ভাইঝি বলেছেন, ‘‘এটা অত্যন্ত দুঃখের দিন। মানুষ তাঁকে দেখে ভোট দেননি।’’ তামিলনাড়ু খুব অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং রাজ্যের মানুষ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন বলে দীপা জয়াকুমার এ দিন মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই তিনি নিজের দল গঠন করবেন এবং নির্বাচনে নামবেন।