—প্রতীকী ছবি।
কাশ্মীরের অনন্তনাগে সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন কাশ্মীরের নেতারা। ওই নেতাদের সমালোচনা করে বিজেপি আজ জানিয়ে দিল, সন্ত্রাসে মদতদাতা পাক প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসা সম্ভব নয়। গত পরশু সন্ধ্যায় অনন্তনাগে জঙ্গি হামলায় পুলিশ এবং সেনার তিন পদস্থ অফিসারের যখন মৃত্যু হয়, তখন দলের সদর দফতরে পুষ্পবৃষ্টির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিয়েছিলেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা, দিল্লিতে জি২০ সম্মেলনের সাফল্য উদ্যাপন করতে। যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। মনে করা হচ্ছে, সেই বিতর্কের অভিমুখ ঘোরাতেই আজ কাশ্মীরের স্থানীয় নেতৃত্ব এবং সন্ত্রাসে পাকিস্তানের ভূমিকাকে নিশানা করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি।
কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে পাল্টা বলেন, ‘‘অনন্তনাগে নিহত মেজর আশিসের মায়ের কথা শুনুন। তিনি বলেছেন, তাঁর ছেলের এবং অন্য অফিসারদের যদি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট থাকত, তাঁদের প্রাণ হারাতে হত না। কাশ্মীরে পর পর ঘটনা ঘটে চলেছে, প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন?’’
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করার পর থেকেই ওই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে। ফলে ওই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বিচ্যুতি হলেই কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই আবহে গত শুক্রবার জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন পদস্থ কর্তার মৃত্যু হয়। কাশ্মীরের জঙ্গি সমস্যার স্থায়ী সমাধান না মেলায় গত কাল প্রয়োজনে পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকের পক্ষে সওয়াল করেন উপত্যকার কংগ্রেস নেতা সইফুদ্দিন সোজ। ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা ফারুক আবদুল্লাও ওই দাবি তোলেন।
বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘কংগ্রেস নেতা সইফুদ্দিন সোজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি জঙ্গিদের মনে কী চলছে তা জানার কথা বলেছেন। ওই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি। ফারুক আবদুল্লা-সহ অন্য অনেক নেতাই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নে সওয়াল করেছেন। কিন্তু ভারত হাজার বার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আলোচনা ও সন্ত্রাস এক সঙ্গে চলতে পারে না। যখন সেনারা মারা যাচ্ছেন, তখন জঙ্গি সন্ত্রাসে মদতদাতা পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলা অযৌক্তিক এবং দুঃখের। ভারতবাসী এর জবাব দেবেন।’’
তবে সীমান্তে যখন অফিসারেরা জঙ্গি দমনে গিয়ে মারা যাচ্ছেন, সে সময়ে মোদী তথা তাঁর দলের উচ্ছ্বাস প্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বিশেষ করে সেনাদের নিহত হওয়ার খবর আসার পরেও কী ভাবে প্রধানমন্ত্রী ওই ভাবে উদ্যাপনে ভেসে যান, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে দলেও।
রাজনীতির অনেকের মতে, বিষয়টি কেবল স্পর্শকাতরই নয়। এর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তি জড়িয়ে যাওয়ায় ওই বিতর্ক ধামাচাপা দিতে আজ পাকিস্তানের সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সরব হয় বিজেপি। বিষয়টি থেকে নজর ঘোরাতেই আজ কংগ্রেস-সহ কাশ্মীরের স্থানীয় নেতাদের পাল্টা আক্রমণের পথ নেয় শাসক শিবির। তবে বিরোধীদের বক্তব্য, গত চার বছর ধরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি থাকা সত্ত্বেও কাশ্মীরে যে এখনও জঙ্গিরা সক্রিয়, তা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে অনন্তনাগের ঘটনায়।